দুর্গাপুর: অবসর গ্রহণ করেছেন বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক৷ নতুন করে নিয়োগ হয়নি৷ ফাঁকা স্কুল৷ এই পরিস্থিতিতে গ্রামের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত গড়তে পাঠদানে এগিয়ে এল গ্রামের চার যুবক-যুবতী৷ নজিরবীহিন ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের লক্ষীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়ার হাইস্কুলের ঘটনা৷
জানা গিয়েছে, আপাতত ওই চার যুবক যুবতীর কাঁধে ভর করেই পড়ুয়া কলরবে মুখরিত থাকে লক্ষীগঞ্জ জুনিয়ার হাইস্কুল৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত রাখতে চার যুবক যুবতী যে দৃষ্টান্ত গড়েছেন তার তারিফ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা৷
আউশগ্রাম ১ ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে লক্ষীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়ার হাইস্কুল৷ লক্ষীগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৩৫০ ঘর আদিবাসী ও ৭৫ ঘর তপশিল জাতি ভুক্ত পরিবারের বসবাস৷ আগে এই লক্ষীগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ছিল না কোন হাইস্কুল৷ সে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হবার পর সেখানের ছাত্রছাত্রীরা আর হাইস্কুল মুখো হতে পারত না৷
লক্ষীগঞ্জে একটি হাইস্কুল গড়ার দাবি নিয়ে প্রশাসনের কাছে বার বার দরবার করে চলেন এলাকাবাসী৷ দাবি মতো লক্ষীগঞ্জে আদিবাসী জুনিয়ার হাইস্কুল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন৷ স্থানীয় শিক্ষাবিদ লক্ষীনারায়ণ ভগতের দানকরা জমিতে ২০১৩ সলে প্রতিষ্ঠা পায় লক্ষীগঞ্জ আদিবাসী জুনিয়ার হাইস্কুল৷ স্বপ্ন পূরণ হয় এলাকার বাসিন্দাদের৷ তিন জন অতিথি শিক্ষক ও প্রায় শতাধিক পড়ুয়াকে নিয়ে শুরু হয় বিদ্যালয়ের পথ চলা৷ স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষীনারায়ণ বাস্কে জানান, বিদ্যালয় চালুর পর থেকে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল৷ তিন অতিথি শিক্ষক অসীম চট্টোপাধ্যায়, নন্দদুলাল দাস ও একতার আলি মল্লিক অবসর নেন৷ কিন্ত, তিন শিক্ষকের অবসর নেওয়ার পর নতুন করে কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়োগ হয়নি৷ এই অবস্থা দেখে অনেক অবিভাবক তাঁদের ছেলে মেয়েদের স্কুল থেকে টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করানো শুরু করেন৷ দিনের পর দিন কমতে থাকে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা৷ অবসর নেওয়ার পর শিক্ষক না থাকায় বন্ধ হয়ে যেতে বসে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন৷ এর পরই স্কুলের দায়িত্ব দেন স্থানীয় চার যুবক-যুবতী৷ বিনা পারিশ্রমিকে গনেশ টুডু, লক্ষীনারায়ণ বাস্কে, দুলালি বাস্কে ও সাবিত্রি মণ্ডল বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়৷
লক্ষীরাম বাস্কে এমএ পড়ছেন৷ গণেশ, দুলালি ও সাবিত্রি বিএ পাস করেছেন৷ ওই চার যুবক যুবতী জানান, ‘‘শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে ৪৫ জন পড়ুয়া স্কুল ছুট হয়ে যাবে৷ এই বিষয়টাই আমাদের ভাবিয়ে তুলেছিল৷ তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা বিদ্যালয় চালু রাখা কথা ভাবি৷’’