কলকাতা: ফের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ৷ এই নিয়ে পরপর তিনদিন একই কাণ্ড ঘটল বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে৷ সূত্রের খবর, পরীক্ষা শুরুর পর ১২টা নাগাদ একই ভাবে মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রশ্নপত্র হলের বাইরে আসার অভিযোগ উঠে৷ ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ যদিও, এই নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি পর্ষদের তরফে৷
এই ছবির সঙ্গে পর্ষদের দেওয়া প্রশ্নের মিল আছে কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷ ছবি, সোশ্যাল সাইট থেকে নেওয়া৷ এই ছবি ঘিরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা৷ মাধ্যমিকের প্রশ্ন-ফাঁস রুখতে সরাসরি পর্ষদকে এড়িয়ে নয়া নির্দেশ জারি করে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ বৃহস্পতিবার স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তরফে সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের কাছে একটি নির্দেশ পাঠানো হয়৷ নির্দেশিকায় সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রশ্ন ফাঁস হওয়া রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে জেলাশাসকদের৷ পরীক্ষা শুরুর আগে স্কুল পরিদর্শনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ স্পর্শকাতর স্কুলগুলিতে নিয়মিত ভিজিলেন্স টিম পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়৷ পরীক্ষা শুরুর আগে কোনও ভাবেই যাতে পরীক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেও ডিএমদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু, এত কিছুর পরও কেন ঘটল এমন ঘটনা? ফের পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরদারি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷
কিন্তু, পর্ষদের মাধ্যমে এই নির্দেশ না পাঠিয়ে হঠাৎ কেন স্কুল শিক্ষা দপ্তর এই পদক্ষেপ নিতে গেলে? সূত্রের খবর, পরপর দু’দিন মাধ্যমিকের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী৷ বুধবার টানা দু’দিন প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পর্ষদ সভাপতিকে বিকাশ ভবনে ডেকে চূড়ান্ত তিরস্কার করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বুধবার ইংরেজি প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠতেই পর্ষদের গোটা দলকে তলব করেন তিনি৷ কীভাবে প্রশ্ন-ফাঁস হচ্ছে? তার জবাবও চান শিক্ষামন্ত্রী৷ সাফ জানিয়ে দেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে ফোন নিয়ে ঢুকলেই বাতিল হবে পরীক্ষা৷ সূত্রের খবর, এর পরই পর্ষদ কর্তাদের ডানা ছাঁটেন শিক্ষামন্ত্রী৷
বুধবার পরীক্ষা শেষে বিকেল পাঁচটা পর্ষদের তরফে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়৷ সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়৷ সূত্রের খবর, পরীক্ষা শেষে আর সাংবাদিক বৈঠক করতে পারবে না পর্ষদ৷ সরকারের তরফে অনুমতি নেওয়ার পরই সাংবাদিক বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? পর্যবেক্ষক মহলের ধারনা, প্রশ্ন ফাঁসের বিতর্ক ঢাকতেই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ এরপরই আজ পর্ষদকে এড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন ফাঁস রুখতে হস্তক্ষেপ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷
বুধবার পরীক্ষা শুরুর কিছু পরেই দ্বিতীয় ভাষার প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় ছড়িয়েছে প্রশ্নপত্রটি। বিষয়টি নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পর্ষদের দেওয়া প্রশ্নের মিল রয়েছে বলেও জানান পরীক্ষার্থীরা৷
মঙ্গলবার এবছরের মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষার প্রথম দিনই বিভিন্ন জেলায় হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে যায়। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার থানায় অভিযোগ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রীও রিপোর্ট তলব করেছেন পর্ষদের কাছে। তবে, শিক্ষা দপ্তরের তরফে রিপোর্ট চাওয়া হলেও নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান পর্ষদের সভাপতি৷ প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে তিনি জানান, ‘‘আমাদের কাছেও একটি ম্যাসেজ আসে৷ তারপরই আমরা বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থাকায় অভিযোগ করি৷’’
মঙ্গলবার পরীক্ষা শুরুতে বেশ কয়েকটি জেলা থেকে প্রশ্ন ফাঁসের খবর ছড়িয়ে পড়ে৷ মালদহ, নদীয়া, কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের খবর বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে হাতেহাতে৷ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন অভিভাবকদের মধ্যে৷ কোথায় কোথায় পরীক্ষা বাতিলের দাবিও উঠতে থাকে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া প্রশ্ন সঠিক কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ তবে, অনেকেই বলছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে এর মিল রয়েছে৷ যদিও, প্রশ্ন-ফাঁসের মতো বিপত্তি এড়াতে এবার কড়া পদক্ষেপ নেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ পরীক্ষার্থী ছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন কারও হাতে প্রশ্ন থাকবে না। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সেকথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর মতে, প্রশ্নের প্যাকেট পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার পর একেবারে পরীক্ষার হলেই খোলা হবে। কোন ঘরে কতজন পড়ুয়া আছে, সেই মতো প্রশ্নপত্রের প্যাকেট তৈরি করা হয়েছে৷ মোবাইল ব্যবহার নিয়েও বেশ কড়া পর্ষদ৷ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত পাঁচজন আধিকারিকই একমাত্র মোবাইল রাখতে পারবেন। তাঁরা হলেন, সেন্টার সেক্রেটারি, অফিসার-ইন-চার্জ, ভেন্যু-ইন-চার্জ, ভেন্যু সুপারভাইজর এবং অতিরিক্ত ভেনু সুপারভাইজর। পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীরা মোবাইল স্কুলে না নিয়ে আসেন, তার আর্জি জানিয়েছেন পর্ষদ সভাপতি। তবে কেউ তা আনলেও, ফোন বন্ধ করে প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে দিতে হবে। তিনি সেগুলি লকারে রেখে তালা দিয়ে তার চাবি ভেন্যু-ইন-চার্জের কাছে দিয়ে দিতে হবে৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে এতকিছু পরও কেন লাগাতার দুই দিনে এই বিভ্রান্তি? পরীক্ষা শুরুর দু’দিনের মধ্যেই যদি এমন বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পরীক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে পড়লে কে নেবে এই দায়? প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকদের একাংশ৷