কলকাতা: এলিয়ান বা ভিনগ্রহীদের নিয়ে নানা কল্পনার একটা জগত রয়েছে বিশ্ববাসীর মনে৷ সেই কল্পনায় ভর করে লেখা হয়েছে বহু গল্প-কাহিনি, তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র৷ তবুও তাদের অস্তিত্ব নিয়ে রয়েছে অনেক সংশয়৷ কিন্তু, জানেন কি, আজ থেকে বহু বছর আগে এই পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছিল এলিয়ানের দল? না কোনও কল্পনা বা চিত্রনাট্য নয়৷ এ এক চরম বাস্তব৷
আরও পড়ুন- ব্যস্ত রাস্তায় ছুটে বেরাচ্ছে জেবরা, দিক-দিশাহীন সেই জেবরা দেখে দৌড়দৌড়ি! রীতিমতো যানজট
সাল ১৯৬১৷ দিনটা ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন নায়াগ্রা ফলস দেখে গাড়ি চেপে নিউ-হ্যাম্পশায়ারের পোর্টসমাউথে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন তরুণ দম্পতি বেটি ও বার্নি হিল। রাত তখন সাড়ে দশটা হবে। গাড়ির স্টিয়ারিং ছিল বার্নির হাতে। নির্জন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা, ‘ইউএস রুট-থ্রি’ ধরে তাঁদের গাড়ি তখন ছুটছে দুর্বার গতিতে৷ হঠাৎ গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে আকাশের দিকে চোখ গেল বেটির৷ ওটা কী? কোনও উল্কা? নাকি অন্য কিছু? কই নীচে নামছে নাতো! বরং ক্রমেই তা উঠে যাচ্ছে উপরে দিকে! অদ্ভূত দর্শন ওই আলোক পিণ্ড নিয়ে বেটি যখন বিস্মিত, তখন হঠাৎই গোত্তা খেয়ে তীব্র গতিতে নীচের দিকে ধেয়ে এল সেই বস্তু। যত নীচে নামছে, ততই তার আকার বড় হচ্ছে৷ সেই সঙ্গে চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য ঠিকরে বেরচ্ছে চারদিক থেকে। টুইন মাউন্টেনের কাছে এসে গাড়ি থামাতে বললেন বেটি। পোষা কুকুর ডিলসেকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন দু’জনে৷ দূরবিনে চোখ রাখলেন বেটি৷ দেখলেন চোখের সামনে উড়ন্ত এক চাকি৷ কাস্তের মতো একফালি চাঁদের নীচে পাক খেয়ে চলেছে৷ উড়ন্ত সেই চাকির গা থেকে বিভিন্ন রঙের চোখধাঁধানো উজ্জ্বল আলো ঠিকরে বেরচ্ছে।
বার্নি তখন স্থির৷ শক্তি যেন হারিয়ে গিয়েছে৷ দূরন্ত গতিতে সেই উড়ন্ত-চাকি যে তাঁকে ধাওয়া করে নীচে নেমে আসছে। কোনও মতে গাড়ি স্টার্ট করে ‘ফ্রাঙ্কোনিয়া নচ’ হয়ে বাড়ির রাস্তা ধরলেন বার্নি। ‘ক্যানন মাউন্টেন’-এর কাছে পৌঁছতেই চমকে উঠলেন তিনি। প্রায় ৪০ ফিট লম্বা সেই অদ্ভুতদর্শন উড়ন্ত-চাকিটা তাঁদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে। তা থেকে ঠিকরে পড়ছে আলো৷ মাটি না ছুঁয়েই পিংপং বলের মতো শূন্যে অনবরত লাফিয়ে চলেছে। ফের স্টিয়ারিং ঘোরালেন বার্নি। ‘ইন্ডিয়ান হেড’এর কাছে আসতেই তাঁদের গাড়ির একেবারে সামনে এসে নিশ্চল হল ইউএফও!
বিপদের পদধ্বনি শুনেই পিস্তল হাতে সেই ভৌতিক যানের দিকে এগিয়ে যান বার্নি। দেখেন, ভিতরে মানুষের মতো দশ-এগারোজন বসে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছে। কারও মুখ ঠাওর হল না৷ মুখ যে ঢাকা৷ পরনে জোব্বার মত ঝকঝকে কালো পোশাক। মাথায় সেনাদের মতো কালো টুপি। মনুষ্য-সদৃশ সেই প্রাণীদের সেনাপতি যেন হাত তুলে বার্নিকে থামতে বলল। তার পরেই ডানা মেলে বার্নির দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে ঝলমলে উড়ন্ত চাকি। যার ডানা থেকে চুঁইয়ে পড়ছিল লাল আলো৷ গাড়ির সিটে বসা বেটির তখন হাড়হিম অবস্থা। ওই ভৌতিক যানের ঝিঁঝিঁ ধরানো তীক্ষ্ণ শব্দ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন তিনি। তার পর সবটাই অন্ধকার৷ সকালে জ্ঞান ফেরার পর কোনওরকমে বাড়ি ফিরে আসেন বিধ্বস্ত বেটি-বার্নি। সোজা চলে যান স্নান ঘরে৷
প্রথমে ভেবেছিলেন অভিশপ্ত রাতের স্মৃতিকে ডাস্টবিনেই বিসর্জন দেবেন৷ কিন্তু কী মনে করে জামাকাপড়ের ব্যাগটা ভিতরে নিয়ে আসেন বেটি৷ খুলে দেখেন তাঁর জামার বোতামগুলো কেউ বা কারা যেন টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে দিয়েছে। শখের জুতোজোড়ার হিল ভাঙা। স্ট্র্যাপ ছেঁড়া। পরনের জামাটা আলমারিতে রাখতে গিয়ে দেখেন, তাতে গোলাপি রঙের একধরনের মিহি পাউডার লেগে রয়েছে৷ যা তাঁকে বিস্মিত করে৷
এর পর বিশ্বের পাঁচ-পাঁচটা স্বনামধন্য রাসায়নিক ল্যাবে বেটির জামার ফরেন্সিক টেস্ট করা হয়৷ কিন্তু, কোনও কিছু উদ্ধার করা যায়নি৷ সেই রাতের পর চিরকালের মতো স্তব্ধ হয়ে যায় হিল দম্পতির ঘড়ি। কেউ সেই ঘড়ি মেরামত করতে পারেনি। দিক-নির্ণয়ে ব্যবহৃত কম্পাসটিও কেউ যেন অকেজো করে রেখে যায়। তাঁদের শেভ্রলে গাড়ির গায়ে ভিনগ্রহীরা যে আঁচড় বসিয়েছিল, সেই দাগ বা স্ক্র্যাচ মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।
এখানেই শেষ নয়৷ ভিনগ্রহীদের নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর দাবি জানান বেটি। তিনি জানান, ঘোরের মধ্যে থাকলেও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কেউ বা কারা যেন তাঁর প্যান্টের চেনের জিপার টেনে খোলার চেষ্টা করছে। চেন খুলে নাভির নীচে সূচ ফুটিয়ে তারা দেখেছিল তিনি গর্ভবতী কি না৷ এই ঘটনার পর মানসিক ভাবে স্থবির হয়ে যান বার্নি। দুঃস্বপ্নের ঘোর তাঁদের গ্রাস করে৷ হিল দম্পতির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে মার্কিন প্রশাসন। ওই বছরই ২১ অক্টোবর, অভিশপ্ত রাতের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন কমিটি অন এরিয়াল ফেনোমেনা’ বা এনআইসিএপি-র সামনে তুলে ধরেন বার্নি। এনআইসিএপি-র দুঁদে গোয়েন্দা আধিকারিক ওয়াল্টার ওয়েব জানান, তাঁরা যে ‘‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ এর মুখোমুখি হয়েছিলেন, এটা সত্য৷ এই বিষয়ে একটি শব্দও বাজিয়ে বলেননি বার্নি৷ কারণ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বার্নির প্রতিটি কথার সত্যাটা যাচাই করেছিলেন তাঁরা।
বেটির সেদিনের পরিধান থেকেও ভিনগ্রহীদের ধর্ষণের সত্যতা মিলেছিল। আজও সেই পোশাক সযত্নে রাখা আছে ডারহামে, ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>