তিয়াষা গুপ্ত: ১৯-এ লোকসভার রাজসূয় যজ্ঞ। বিরোধী জোটে প্রথম থেকে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বিরোধী মঞ্চ থেকে যেকটা নাম উঠে আসছে, তার মধ্যে মমতাও উল্লেখযোগ্য। ২০১৮-এ ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে মমতা কল্কে পেয়েছেন। এখন ১৯ কী বার্তা আনে তৃণমূলনেত্রীর জন্য সেটাই দেখার।
পঞ্চায়েত নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। শেষপর্যন্ত বাজিমাত করেছেন তৃণমূলনেত্রীই। ফলাফলে তাঁর দলেরই জয়জয়কার। পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাসক দল জেলা পরিষদ স্তরে ৯৫ শতাংশ আসনে, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৯০ শতাংশ আসনে, গ্রাম পঞ্চায়ের স্তরে ৭৩ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছে। পঞ্চায়েতের ফল প্রকাশের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, তাঁর দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ ওঠা স্বত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে শতকরা ৯০ ভাগ আসন জিতেছে। এরপর তাঁর দৃপ্ত ঘোষণা, জনগণ তাঁদের সঙ্গেই আছেন।
২০১৮-এ রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় পরের পর উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। কর্পোরেটের ইঁদুর দৌড় নিয়ে আলোচনা হলেও সাফল্য অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। এই সালেই পূর্ব ভারতে প্রথম হার্ট প্রতিস্থাপন হয়েছে কলকাতায়। প্রথম ২ টো ফোর্টিসে। তারপর আরএন টেগোরেও হয়। পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো সরকারি হাসপাতালেও হার্ট প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে। গত মে মাস থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৭টি হার্ট প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে কলকাতার বুকে। অবশ্যই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ইতিহাসে এটা এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে লেখা হয়ে থাকল।
তবে ২০১৮-এ যে সব ঘটনা রাজ্যের বুকে কলঙ্ক, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, মাঝেরহাট ব্রিজের একাংশের ভেঙে পড়া। মৃত্যু এড়াতে পারেনি এই ঘটনা। এরপর নাগেরবাজারে বিস্ফোরণ। অবশ্যই রাজ্যের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়। এবার আসা যাক জাতীয় রাজনীতির কথায়। সেখানে প্রথম থেকে উল্লেখযোগ্য নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতে বিজেপিকে ঠেকাতে বহুদিন ধরে জোট গঠনের প্রয়াস চলছে। মমতা তাতে উল্লখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্ব উপেক্ষা করার ক্ষমতা দেখাননি কেউই। তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে যে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু লালুপুত্র তেজস্বী বলেছিলেন, মমতা থেকে মায়াবতী- অনেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ৫ রাজ্যের ফল প্রকাশের আগে দিল্লিতে নায়ডুর ডাকে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন মমতা। ঠিক হয় লোকসভা ভোটের পর জোটের নেতা ঠিক করা হবে। তারপরেও তামিলনাড়ুতে এক অনুষ্ঠানে স্ট্যালিন রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রস্তাব করেন। এরপর মমতা উষ্মা চেপে না রেখে জানান, বিষয়টি লোকসভা ভোটের ফলাফল দেখে ঠিক করা হবে। এদিকে তেলেঙ্গানার ফলে চাঙ্গা হয়ে কেসিআর অকংগ্রেসি ও অবিজেপি জোট গড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেন। মমতা কোন দিকে থাকবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে জাতীয় রাজনীতিতে মমতাকে উপেক্ষা করা যে অসম্ভব, তা ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে।
বেশ কয়েকটা ক্যালেন্ডার উল্টে একটু পুরনো ঘটনায় আলো ফেলা যাক। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম অপরাজেয়। একসময়ের এই মিথকে ভেঙে তিন দশকের বাম জমানার অবসান ঘটিয়েছেন মমতাই। রাইটার্সে সদর্পে পা রাখেন তৃণমূলনেত্রী। সব অচলায়তন ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হল মমতার সরকার। শুরু হল নবতম ইতিহাস। তারপর রাজ্যে তাঁর বিজয় রথ এগিয়ে চলেছে। ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। জাতীয় রাজনীতিতেও আজ তিনি অগ্রগণ্য এক নাম। যাঁকে এড়িয়ে চলা অসম্ভব মোদী কিংবা রাহুল-সোনিয়ারও।