আজ বিকেল: ভোটে জিততে নির্বাচনী ইস্তাহারে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢালাও প্রতিশ্রুতি ও আর্থিক বরাদ্দের গল্প শোনায় রাজনৈতিক দলগুলি। ভোট মিটলে ক্ষমতায় আসার পর সেসব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলেই যায় শাসকদল।যেমন পরিকাঠামো বৃদ্ধি, স্কলারশিপ, কম খরচে সবার জন্য উচ্চশিক্ষা, অনগ্রসর অংশের জন্য শিক্ষা, উদ্ভাবনী শিক্ষা, উচ্চমানের শিক্ষা ও উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে কাগজে কলমে প্রতিশ্রুতির উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থের জোগান নেই। আর্থিক বরাদ্দ কমতে কমতে জিডিপি এসে ঠেকেছে এক শতাংশে। যখন সাধ্যের মধ্যে উন্নয়নের সম্ভাবনা নেই তখন কেন ইস্তেহারে বড় বড় বুলি লেখা হয়, এবার এই বিষয়টি নিয়েই সরব হল সারা বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি(আবুটা)।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে আবুটা। বিভিন্ন দলের ইস্তাহারে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি কী ভাবে এসেছে, তা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা তাঁর পূর্বসূরি নরসিংহ রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ী ও মনমোহন সিংয়ের সরকার আসার আগে নির্বাচনী ইস্তাহারে বরাবর ইতিবাচক নানা আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং সেগুলির উৎকর্ষ অর্জনের বাধা বাস্তবে দূর হয়নি। জনস্বার্থ নয়, বাণিজ্যিক স্বার্থে উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকরণই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এবার যে তেমনটা হবে না, সে কথা স্পষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে, এমনটাও কেউ বলেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকদের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হবে না, এমন অঙ্গীকারও কোনও ইস্তেহারে নেই।
আবুটার দাবি, দলগুলির মূল অ্যাজেন্ডা হল আরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের সেরা ৫০০-র মধ্যে নিয়ে এসে শিক্ষার বাজারকে লোভনীয় করে তোলা। কারণ, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিক্ষা বাজার। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসাবেও যথেষ্ট লোভনীয়। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই শিক্ষা ঋণ দিতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রেডেড অটোনমি, র্যা ঙ্কিং ও গ্রেডিং সিস্টেম, শিক্ষা নিয়ামক সংস্থাগুলির কাঠামোয় পরিবর্তন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে মেধা অনুযায়ী অর্থ সাহায্য, বাণিজ্যমুখী দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স, ভোকেশনাল কোর্স, চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস), ইউজিসি বিলোপ ঘটিয়ে প্রস্তাবিত হায়ার এডুকেশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (হেকি) গঠনের বিরোধিতা করে এ সবের পরিবর্তনের কথা কোনও ইস্তাহারে নেই বলে ওই শিক্ষক সংগঠনের ক্ষোভ।
সংগঠনের বক্তব্য, লিংডো কমিশনের সুপারিশে যখন একপক্ষ ছাত্রদের ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নিল, নিট চালু করল, তখন অন্যপক্ষ নীরব রইল। আর ক্ষমতায় আসার পরে সেই ‘কালা কানুন’ প্রয়োগের সুযোগ নিল। যারা ছাত্রদের অধিকার কেড়ে নিল তারাই এখন বলছে ‘স্টুডেন্টস রাইট বিল’ আনবে। ‘নিট’ বাতিল করবে। বাণিজ্যিকীকরণের জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বিল, উচ্চশিক্ষায় এফডিআই বিল, ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি এজেন্সি বিল, ট্রাইব্যুনাল ফর অ্যাডজুডিকেশন অফ ডিসপিউটস ইন হায়ার এডুকেশন বিল সংসদে উভয় পক্ষের বোঝাপড়ার মধ্য দিয়েই পাস হয়েছে।
আবুটার সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতির কথায়, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী যেন ‘উপাচার্যদের উপাচার্য’ এবং মন্ত্রকটি যেন ‘সুপার বিশ্ববিদ্যালয়’। অথচ মন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রক আসলে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চোখে বহিরাগতই। আবুটা চায়, নতুন সরকার এই সব ব্যবস্থা বা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে উচ্চশিক্ষার জন্য নীতি গ্রহণ করুক।’