কলকাতা: ভিনগ্রহী বা এলিয়েনদের নিয়ে কল্পনার কোনও অন্ত নেই৷ পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরাও৷ রাতের আকাশে মাঝে মধ্যেই দেখে মেলে আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবডেক্ট বা ইউএফও-র৷ ভিনগ্রহীদের এই যান নিয়েও উৎসাহের কোনও খামতি চোখে পড়ে না৷ কিন্তু সত্যই কি আছে এলিয়ান? হয়তো আছে৷ কারণ, পৃথিবীতে বারবার নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে ভিনগ্রহীরা৷
আরও পড়ুন-
১৯৬১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর৷ প্রথম ভিনগ্রহী যানের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছিল তরুণ দম্পতি বেটি ও বার্নি হিল। শুধু তাই নয়, ওই যানের মধ্যে মনুষ্য-সদৃশ প্রাণীরও দেখা পেয়েছিলেন তাঁরা৷ সেদিন হিল দম্পতির পথ আগলে দাঁড়িয়েছিল আলো ঝলমলে ভিগ্রহীদের সেই যান৷ সেই রাতে তাঁদের সঙ্গে এমন এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, যার সমাধান আজও মেলেনি৷ এর বহু বছর পর ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ফের একবার দেখা মেলে ভিনগ্রহী যানের৷ মার্কিন বিমানবাহী রণতরী নিমিটজের নৌবাহিনীর পাইলট চ্যাড আন্ডারউড টিক-ট্যাকের মতো অষ্টভুজাকার বিশালকায় এক ইউএফও প্রত্যক্ষ করেন। শুধু চর্মচক্ষে দেখাই নয়, সেদিন নিজের ‘ফরওয়ার্ড লুকিং ইনফ্রারেড গান পড ক্যামেরা’ (ফ্লির) দিয়ে ইউএফওটির অদ্ভুত আচরণকেও ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন চ্যাড। ওই ইউএফও-র নামকরণও করেন তিনি৷
২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম টিক-ট্যাক ইউএফও-র কথা শোনা যায়। সান দিয়েগোর পশ্চিম উপকূলে ‘স্যান ক্লেমেন্টে’ দ্বীপে একসঙ্গে প্রায় দশটি বিকটদর্শন বস্তুকে উড়তে দেখেন রেডার অপারেটর কেভিন ডে। ২৮ হাজার ফিট উচ্চতায় কোনও পাখির পক্ষে ওড়া সম্ভব নয়। আর বিমানের গতি এত মন্থর হয় না৷ তাহলে ওটা কী ছিল? ইউএফও?
অপর একটি বিমানবাহী রণতরী, ‘প্রিন্সটন’ থেকেও টিক-ট্যাক ইউএফওর উপর তখন ক্রমাগত নজরদারি চালানো হচ্ছিল। কিন্তু শত চেষ্টা করেও টিক-ট্যাককে ট্র্যাক করতে পারছিল না ‘প্রিন্সটন’-এর রেডার। টিক-ট্যাকের পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে এক সময় সেই রেডারই বিকল হয়ে পড়ে৷ প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, কম্পিউটারের মতো ভাইরাস আক্রমণেই সেটি বিগড়েছে৷ কিন্তু কোথায় ভাইরাস? তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভাইরাস মেলেনি৷ অবশেষ নতুন করে ফরম্যাট করা হয় রেডার। ইতিমধ্যে ব্ল্যাক এসেজের কমান্ডিং অফিসার ডেভ ফ্রেভারের উত্তেজিত গলা ভেসে এল কানে…।
ফাইটার জেট ওড়াতে ওড়াতেই তিনি জানালেন, মাঝ আকাশে এক অদ্ভুত দর্শন বস্তুর দেখা পেয়েছেন৷ যেটি প্রায় ৪০ ফিট লম্বা। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তা ১৫-২৪ হাজার ফিট উচ্চতায় ক্রমাগত নামা-ওঠা করছে। ইঞ্জিনের কোনও শব্দ কানে আসছে না৷ দেখা যাচ্ছে না ধোঁয়া৷ হঠাৎই গোত্তা মেরে তা নেমে আসে নীচের দিকে৷ তারপর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রায় ৫০ ফিট গভীরে ডুবে দেয় সেই যান৷ কিন্তু, চোখের পলক পড়ার আগেই জল থেকে লাফিয়ে উঠে প্রায় ২০ হাজার ফিট উচ্চতায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি আবার উপরে উঠতে শুরু করে এবং প্রায় ৫০ হাজার ফিট উচ্চতায় উঠে যায়৷ অদ্ভুত দর্শন সেই বস্তুটির গতিবিধি দেখে সেদিন কার্যত হতবম্ভ হয়ে গিয়েছিলেন ব্ল্যাক এসেজের কমান্ডিং অফিসার।
ফ্রেভারের ইউএফও চাক্ষুস করার ঘণ্টা খানেক পর নিজের ‘ফ্লির’ ক্যামেরায় টিক-ট্যাককে ধরতে পারলেন আন্ডারউড। ততক্ষণে প্রিন্সটনের রেডারেও টিক-ট্যাকের আবছা ছবি ধরা পড়েছে। পরবর্তীকালে ফ্রেভার বলেছিলেন, ওমন এক অবিশ্বাস্য উড়ানযান পেলে একবার অন্তত উড়িয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। নিমিটজের ক্যারিয়ার ভেহিকেল ইন্টেলিজেন্স সেন্টারে প্রথমবার ‘ফ্লির’ ক্যামেরায় তোলা ইউএফও-র সেই ভিডিয়ো চালিয়ে দেখা হয়। এর ১৭ বছর পর, সেই গোপন ভিডিয়োটি নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেয়৷
আন্ডারউড পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, তাঁর ফাইটার জেটের ডানার নীচে লাগানো ছিল ‘ফ্লির’ ক্যামেরা। সেই কারণেই এত ভালো ছবি ধরা পড়েছে। তবে কোনও সূত্রে বেঁধেই তিনি মেলাতে পারেননি যে, পৃথিবীতে উড়ে বেড়ানো একটি বস্তু অভিকর্ষজ ত্বরণকে উপেক্ষা করে, কী ভাবে শব্দের থেকেও দ্রুতগতিতে উড়তে পারে! আন্ডারউডের দৃঢ় বিশ্বাস, এটি ইউএফও ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কারণ, মানুষের চেয়ে বহুগুণ উন্নততর মেধা-মস্তিষ্ক এবং প্রযুক্তির প্রয়োগ ছাড়া এই ধরনের আকাশযান নির্মাণ করা সম্ভব নয়৷ পরবর্তী সময়ে পেন্টাগনের ‘অ্যাডভান্সড এরোস্পেস থ্রেট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম’ স্বীকার করে নেয় টিক-ট্যাক আদতে ইউএফও।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>