আজ বিকেল: বাংলার লাল মাটি শুধু জঙ্গলমহলের গন্ধই বয়ে আনে না, মেধা ও সংগ্রামের ইতিহাসেও যে সে মাটির একমাত্র অধিকার। তা মাতঙ্গিনী হাজরা, ক্ষুদিরাম বসু হোক কিম্বা বিদ্যাসাগর। চলতি বছরে মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী সেই মেদিনীপুরের পড়ুয়া। একসঙ্গে দশম স্থানাধিকারী সেই মেদিনীপুরেরই, ঝাড়গ্রামের বাঁধগোরা অঞ্চল বিদ্যালয়ের ছাত্র শুভদীপ মাজি।
এবছরে ১৫ জন পড়ুয়ার সঙ্গে সে-ও মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকার করেছে। অন্যদের সঙ্গে ৬৮০ নম্বর পেয়েছে শুভদীপও। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করে জঙ্গলমহলের অখ্যাত বাঁধগোড়া স্কুল। ছেলের সাফল্যে খুশি শুভদীপের বাবা-মা। তাঁর মা জানিয়েছেন, শহরের স্কুলে ভাল পড়াশোনা হয় গ্রামে হয় না, এই তথ্যকে ভুল প্রমাণ করেছে ছেলে।
শুভদীপের বাড়ির মধ্যেই তার বাবার ভুষিমালের ছোট দোকান। চাষের কাজও করে বাবা। তাই কখনও অঙ্ক কষতে কষতে, কখনও বা ইতিহাস পড়তে পড়তে দোকান সামলাতে হতো শুভদীপকে। তবুও কখনও পড়াশোনার প্রতি কোনও খামতি ছিল না তার। শুভদীপের বাড়ি ঝাড়গ্রামের বাঁধগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জামশোলা গ্রামে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। প্রতিদিন সাইকেলে করেই স্কুল যেতো সে ও তার ভাই সাগ্নিক। মাধ্যমিকে তার দশম হওয়ার খবরে এত আনন্দেও কান্নার বাঁধ ভাঙে শুভদীপের মায়ের চোখে। বলেন, “অনেক কষ্ট করে ছোটবেলা থেকে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। প্রাইভেট টিউটর দিতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষকরাই তৈরি করে দিয়েছে ওকে। শহরের স্কুলেই ভালো পড়াশোনা হয়, গ্রামের স্কুলে হয় না, এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল আমার ছেলে।”
আর শুভদীপের কথায়, “মা বাবা পাশে না থাকলে হয়তো এত ভালো ফল করতে পারতাম না। স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারাও সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন আমাকে।” বিজ্ঞান শুভদীপের প্রিয় বিষয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে চায় শুভদীপ। ডাক্তার হতে চায়। পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আঁকা ও ক্রিকেট খেলারও মস্ত ভক্ত সে।