তিয়াষা গুপ্ত: হোক না পুরনো দিনের কথা- পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কাঁটাতারেরর ব্যবধান। মনের মিল বিস্তর। মিলের কমতি নেই, ভাষার মিল, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিতে মিল, আমাদের এক রবীন্দ্রনাথ, এক নজরুল। আমরা ভালোবাসায় এক। দুই বাংলা ভাষা শহিদ দিবসে একই আবেগে ভেসে যায়। আমাদের দুর্গাপুজোয় ভাসে বাংলাদেশ, ঈদের আনন্দে ভেসে যাই আমরাও। এত গৌরবের মধ্যেও লজ্জা একটা জায়গায়। রক্তপাত, মৃত্যু এড়াতে পারল না বাংলাদশের নির্বাচন। রক্তপাত এড়াতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটও। মৃত্যু মিছিলের তুল্যমূল্য বিচার করার সময় এটা নয়। প্রশ্ন একটাই, গণতন্ত্রের মহাযজ্ঞে কেন রক্তপাত হবে? এই মৃত্যু মিছিল দুই বাংলার গৌরবের ইতিহাসকে রক্তাক্ত করে দিল।
কিছুদিন আগেই হিংসার আবর্তে শেষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে এড়ানো গেল না হিংসা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আয়তনে ছোট হলেও গোটা একটা দেশে যেখানে ভোটের বলি ১৪, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান লজ্জায় রাজ্যবাসীর মাথা নত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
ইতিহাস বলছে, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে মৃত্যুর রেওয়াজ নতুন নয়। এবার আগের তুলনায় মৃত্যু মিছিলের সংখ্যাটা কমেছে। বাংলাদেশেও একই ট্রেন্ড চালু আছে। মৃত্যু আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। মৃতের সংখ্যা কমেছে বলে উদ্বাহু নৃত্য করার কারণ নেই প্রশাসনের। বরং এই সংখ্যাটাকে কীভাবে শূন্যে নামিয়ে আনা যায়, সেটাই নিশ্চিত করুক নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতে বেশ কিছু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বতায় জয়ী হয়েছেন অনেক প্রার্থী। এই ধারাবিহকতা দেখা গেল বাংলাদেশেও। বলাই বাহুল্য, এটা সুস্থ গণতন্ত্রের নজির হতে পারে না।
ভোট চলবাকালীন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ ও বিরোধী বিএনপি সমর্থকরা। দিনভর ভোটে কারচুপির অভিযোগে সরব বিরোধীরা। এদিকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে গণনাও। তবে বিকেল ৪টে পর্যন্ত জাতীয় সংসদের ২৯৯ আসনে মোট কত শতাংশ ভোট পড়েছে, সে সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের তরফে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে গণনা যেভাবে এগোচ্ছে তাতে প্রথম কয়েক রাউন্ডের পর হাসিনার হাসি চওড়া হচ্ছে। ফলাফল কোনদিকে যাবে, এখনই তা বলার সময় আসেনি।