আজ বিকেল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কন্যাশ্রী’, ‘সবুজ সাথী’-র প্রকল্পের সুফল মিলছে। বিনামূল্যে বই ও পোশাক পেয়ে রাজ্যে স্কুলছুটের সংখ্য়া অস্বাভাবিক হারে কমেছে। এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক লক্ষণ। শুধু কি সরকারি প্রকল্প, নাকি পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ভূমিকাও এর পিছনে রয়েছে, সেটাও ভেবে দেখার মতে বলে মনে করছে শিক্ষামহলের একাংশ। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট সদ্য তৈরি হয়েছে। তাতেই রয়েছে এই চমকপ্রদ তথ্য। এবারই প্রথম মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ড্রপ আউটের হার পৃথকভাবে তৈরি করা হয়েছে। তাতে যদিও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। তবে, প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচক পরিবর্তন সরকারকে বাড়তি অক্সিজেন দিতে পারে।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ড্রপ আউটের হার ছিল -২.৪৬ শতাংশ। পরের শিক্ষাবর্ষে তা সামান্য বেড়ে হয়েছে -২.১১ শতাংশ। কিন্তু তাক লাগিয়ে দিয়েছে উচ্চ প্রাথমিক। সেখানে আগেরবার ৭.৭২ শতাংশ ড্রপ আউটের হার ছিল, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তা একধাক্কায় কমে দাঁড়িয়েছে -০.১৯ শতাংশে। কিন্তু স্কুলছুটের হার নেতিবাচক হয় কীভাবে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিভিন্ন ক্লাসে মাঝপথে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। এদের একটা বড় অংশই আউট অফ স্কুল চিলড্রেন। অর্থাৎ যে শিশুরা স্কুলের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছিল। আবার বেসরকারি নার্সারি বা প্রাথমিক স্কুল থেকেও সরকারি স্কুলে আসে বহু পড়ুয়া। দুইয়ের ফলেই নেগেটিভ হতে থাকে ড্রপ আউট। তবে, উঁচু ক্লাসে ড্রপ আউটের হার উদ্বেগে রাখতে পারে রাজ্য সরকারকে।
দেখা যাচ্ছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে ড্রপ আউট হয়েছে ১৪.৬৩ শতাংশ। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সেই হার ১১.০৬ শতাংশ। এদের একটা বড় অংশই দশম বা একাদশ শ্রেণীতে পড়তে পড়তেই স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। কেউ ছাড়ছে মাধ্যমিকের পর। শিক্ষামহলের একাংশের মতে, কিশোরদের ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। সোনা বা জরির কাজ, এমনকী, খেতমজুরের কাজ করতেও অনেকে ভিন রাজ্যে পাড়ি জমায়। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি অনীহা তাদের আরও বেশি তৈরি হচ্ছে উঁচু ক্লাসে উঠে ফেল করার কারণে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল না থাকায় তারা কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। কিন্তু পাশফেল ফিরে আসার পরেই তারা মুখ থুবড়ে পড়ছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, উঁচু ক্লাসে ড্রপ আউটের হার কিন্তু এখনও উদ্বেগজনক। সেটা কমানোর জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা উচিত। তবে উচ্চ প্রাথমিকে ড্রপ আউটের হার বেশ স্বস্তি দিচ্ছে।