গয়নাপ্রীতি নেই, এরকম মহিলা সারা বিশ্বে খুঁজলে হয়তো একজনও পাওয়া যাবে না। গয়না পরতে সকলেই ভালোবাসেন। আর সেই গয়নার মাধ্যমে যদি জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে? তাহলে তো আর কথাই নেই। সাজও হল, সহবাসও হল বিনা চিন্তায়, একেবারে ষোলোকণা পূর্ণ। তবে গয়নার মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণ এটা পড়ে ভাববেন না যেন মিথ। বাস্তবেই এমনটা সম্ভব। প্রযুক্তি ও চিকিত্সাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতিতে আজ কনট্রাসেপশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে গয়নার ব্যবহার রীতিমতো সফল। তবে আমাদের দেশে এখনও আসেনি এই প্রযুক্তি। পাশ্চাত্যে আসছে।
বিভিন্ন সময়ে নানারকম জন্মনিরোধক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা, যেমন ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল, ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল, কপার টি, ফিমেল কন্ডোম, এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল একটি নতুন নাম-জুয়েলারি কন্ট্রাসেপশন। এই পদ্ধতিতে কানের দুল, হাতঘড়ি, আংটি, গলার হার, হাতের চুড়ি মানে এক কথায় সমস্ত রকম গয়নার মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। আসুন কীভাবে তা সম্ভব সেই অভিনব পদ্ধতিটি সম্পর্কে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ইনসিটটিডট অব টেকনোলজির কেমিক্যাল ও জৈব-আণবিক প্রযুক্তি বিভাগের গবেষকরা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এর মাধ্যমে এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে, যাতে গয়না, চুরি, দুল, নেকলেস বা হাতঘড়ির মাধ্যমে শরীরে জন্ম নিরোধক হরমোন প্রবেশ করানো হবে। ওই গয়নায় একটি ছোট্ট জায়গায় রাখা থাকবে সেই বিশেষ হরমোনটি। সেটি ত্বকে আপনা থেকেই শোষিত হয়ে যাবে। এরপরে রক্তে মিশে তা শরীরে প্রবাহিত হয়ে নিজের কাজ করবে। ফলে ওই গয়না পরার এক বা দুইঘণ্টা পরে যদি আপনি সহবাস করেন তাহলে ওরাল কনট্রাসেপটিভ আর খেতে হবে না।
তবে শরীরে তা কতক্ষণ কার্যশীল থাকবে বা এর ফলে দিনে কতবার যৌনসম্পর্ক করা যাবে, বেশিদিন একটানা ওই গয়না পরে থাকলে হরমোনের কার্যকারিতা হ্রাস পাবে কি না, এইসব নিয়া বিজ্ঞানীরা এখনও স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে পারেননি। মানুষের উপর এই পরীক্ষা হয়নি, তবে খুব শীঘ্রই হবে। আপাতত শূকর, লোমহীন ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা সফল হয়েছেন। তাতে দেখা গেছে গয়নার ত্বকসঙলগ্ন ছোট্ট একটি অংশ দিযে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে জন্ম নিরোধক হরমোন ঢুকছে।
তবে ইঁদুরের উপর যতটুকু পরীক্ষা হয়েছে তাতে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে কোনও মানুষ যদি রাত্রে শোওয়ার সময়ে এই গয়না আটঘণ্টা খুলে রাখে, তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয় তবে এ-বিষয়ে আমাদের আরও বিশদে গবেষণা করতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শূকর ও ইঁদুরের কানে জন্ম নিরোধক লিভোনোজেস্ট্রিল হরমোনসমৃদ্ধ দুল পরানো হয়েছিল। ত্বকের মাধ্যমে শোষণযোগ্য ওষুধ প্রযুক্তি ১৯৭৯-এই আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে গয়নার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানোর ঘটনা এই প্রথম ঘটল।