সামান্য একটি চারা থেকে আস্ত অরণ্য গড়লেন ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’

মাজুলি: এ যেন এক সবুজ দ্বীপের রাজার গল্প৷ সবুজ অরণ্য গড়ার মন্ত্র জানেন এই রাজা৷ তবে এ কোনও কল্পকথা নয়৷ একটি চারা থেকে একটা আস্ত অরণ্য রাজ্য গড়ে তোলার বাস্তব কাহিনি৷ সেই রাজাও আছেন বাস্তবে৷ তিনি যাদব মোলাই পায়েঙ, বয়স ৫৫৷ অসমের জোরহাট জেলার উত্তর-পশ্চিমে কোকিলামুখের কাছে অরুণা চাপোড়িতে তাঁর বাস৷ আর তার রাজত্ব চাপোড়ি

সামান্য একটি চারা থেকে আস্ত অরণ্য গড়লেন ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’

মাজুলি: এ যেন এক সবুজ দ্বীপের রাজার গল্প৷ সবুজ অরণ্য গড়ার মন্ত্র জানেন এই রাজা৷ তবে এ কোনও কল্পকথা নয়৷ একটি চারা থেকে একটা আস্ত অরণ্য রাজ্য গড়ে তোলার বাস্তব কাহিনি৷ সেই রাজাও আছেন বাস্তবে৷ তিনি যাদব মোলাই পায়েঙ, বয়স ৫৫৷ অসমের জোরহাট জেলার উত্তর-পশ্চিমে কোকিলামুখের কাছে অরুণা চাপোড়িতে তাঁর বাস৷ আর তার রাজত্ব চাপোড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে ‘মোলাই ফরেস্ট’৷ তবে তাঁর রাজ্যপাটে শুধুই প্রকৃতির ঠাঁই৷ আর আছে বাঘ, হাতি, গন্ডার, বাঁদর, পাখিদের অবাধ বিচরণ৷

ব্রহ্মপুত্রর বুকে জেগে ওঠা পৃথিবীর সবথেকে বড় নদীমাতৃক চরটির নাম হল মাজুলি৷ এই দ্বীপেরই অরুণা চাপোড়ি গ্রামের যাদব মোলাই পায়েঙ৷ ১৯৭৯ সালে যখন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে আসাম৷ যাদব তখন ষোল বছরের কিশোর৷ সদ্য ক্লাস টেন পাশ করেছেন বালিগাঁও জগন্নাথ বরুয়া আর্য বিদ্যালয় থেকে৷ বন্যায় বালির আস্তরণে ঢেকে গেছিল এই দ্বীপ৷ জনপদ বাঁচাতে আসামের গোলঘাট জেলার সোস্যাল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে চাপোড়ি গ্রামে ২০০ হেক্টর জায়গাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বালি সরিয়ে গাছ লাগানোর কাজ৷ অন্য মজুরদের সাথে কাজে লাগলেন যাদবও৷ এইসময় যাদব খেয়াল করলেন ব্রহ্মপুত্রের ওপর একটা বালির চর জেগে আছে, অরুণা চাপোড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ওই বালির চরে সবুজের কোনো চিহ্ন ছিলনা৷ বন্যার জল অনেকগুলো সাপ ভেসে এসেছিল ওই বালির চরে৷

অস্বাভাবিক গরম আর জলজঙ্গলের অভাবে বেশ কিছু সাপ মারা যায়৷ যাদবের মনে প্রশ্ন ওঠে৷ সবুজের অভাবে একদিন এভাবেই কষ্ট পেয়ে মরতে হবে মানুষকেও৷ সময় নষ্ট না করে ওই বালির চরে চলে গেলেন যাদব৷ শুরু হল তার সবুজ অভিযান৷ এরপর থেকে কখনো বীজ ছড়িয়ে, কখনো চারা পুঁতে ৫৫০ হেক্টর জায়গা জুড়ে একাই গড়ে তুললেন সেই বিশাল বনভূমি৷ ধীরে ধীরে এই বনভূমি হয়ে উঠল বন্যদের নিরাপদ আশ্রয়৷ এখন এই মোলাই ফরেস্ট প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ৷

তার এই সবুজ বিপ্লবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক৷ ভরসা দিয়েছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও৷ বনাঞ্চল গঠন ও সংরক্ষনের জন্য তাকে ‘ফরেস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ উপাধি দিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম তাঁকে ৷ ২০১৫ সালে পেয়েছেন পদ্মশ্রী৷ রাষ্ট্রসংঘের ডাক পেয়েছেন৷ একের পর এক সম্মান পাওয়ার পরে ব্যস্ততা বেড়েছে৷ কিন্তু কমেনি মাটির টান৷ তবে সবুজ বাঁচানোর ডাক পেলেন বিশ্বের যেকোন প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন এই ফরেস্ট ম্যান৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight + 1 =