নয়াদিল্লি ও কলকাতা: মোদি সরকারের নতুন শিক্ষানীতির খসড়া চূড়ান্ত৷ নীতি রূপায়ণের রোডম্যাপ সহ ক্যাবিনেট নোটও তৈরি করে ফেলেছে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক৷ কিছুদিনের মধ্যেই মোদী মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা ছাড়পত্র পেয়ে যাবে৷ এরপর সংসদর আসন্ন শীত অধিবশনে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করা হবে চূড়ান্ত নতুন শিক্ষানীতি৷ সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার জন্য আপাতত ৫৫ পাতার নোট তৈরি হয়েছে, তাতে নতুন শিক্ষা নীতির বিশেষ ব্যবস্থাগুলির কথা বলা হয়েছে৷
নতুন এই শিক্ষানীতিতে উচ্চ শিক্ষা ও স্কুল শিক্ষায় প্রচুর পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে৷ যেমন, বলা হয়েছে, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো বিএ, বিসেসি, বিকম নিয়ে পড়ার জন্য কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও একটি সর্বভারতীয় পরীক্ষা হবে৷ সেখানে র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে৷ কলেজগুলির কাট অফ মার্কস ঠিক করাটা এবার ইতিহাস হয়ে যাবে৷ বিএ, বিএসসি, বিকম আগের মতো চালু থাকবে, তবে কিছু বিষয় বাতিল করা হতে পারে৷ আর বিষয় বাছার ক্ষেত্রেও ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা থাকবে৷ কলা বিভাগের বিষয়ের সঙ্গে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগের বিষয় নেওয়া যাবে৷ এমফিল বন্ধ হয়ে যাবে৷ পিইচডি-কে ঢেলে সাজা হবে৷ ২০২৩ থেকে দু-বছরের বিএএড আর থাকবে না৷ তখন বিএডের ক্ষেত্রেও পাঁচ বছরের সুসংহত কোর্স চালু হবে৷ সেই সঙ্গে স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর জোর দেওয়া হবে৷ সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ডিস্ট্যান্স এডুকেশন চালু করা হবে৷
পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রেও বড়সড় পরিবর্তন আনার উল্লেখ রয়েছে নতুন শিক্ষানীতির খসরায়৷ স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তন বিদেশি ধাঁচে হাতে কলমে কাজের ওপরেই জোর দেওয়া হয়েছে৷ পছন্দমত বিষয় বেছে নিতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা৷ বছরে দুবার হতে পারে বোর্ডের পরীক্ষা৷ ২০২০র জাতীয় শিক্ষানীতিতে পাঠ্যসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনসিইআরটিকে৷ স্কুলে প্র্যাক্টিকাল ও স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে এই খসরায়৷
শিক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, এই শিক্ষানীতির বিষয়গুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত৷ সেক্ষেত্রে কোন বিষয়টাকে প্রথমে রূপায়ণ করা দরকার, সেটা বোঝা জরুরি৷ তাই কেন্দ্র ও রাজ্যকে যৌথভাবে এইশিক্ষানীতি রূপায়ণের বিস্তারিত পরিকল্পনা নিতে হবে৷ একইসঙ্গে সময়মতো নীতি রূপায়ণের জন্য বাড়তি অর্থ, মানবিক এবং পরিকাঠামোগত যে সম্পদের প্রয়োজন তাও কেন্দ্র ও রাজ্যকে ভাগ করে নিতে হবে৷ পাশাপাশি সব বিষয়গুলি যাতে সমান গুরুত্বের সঙ্গে রূপায়িত হয় সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে৷
এদিকে এই নতুন শিক্ষানীতির খসড়ার বেশকিছু বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট রাজ্যের শিক্ষামহল৷ তাদের মতে নতুন নীতিতে শিক্ষাখাতে অর্থের যোগান কম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণী মিলিয়ে একটাই সেকেন্ডারি স্টেজ করা হয়েছে৷ এরফলে দুস্থ ছাত্রছাত্রীরা দশম শ্রেণীর যোগ্যতা নিয়ে চাকরি পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে৷ অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগে যারা থাকবেন তাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি৷ তাদের মতে কিছু নীতিতে পরিবর্তন আনা হলেও কেন্দ্রের আধিপত্য থেকেই যাচ্ছে৷