কলকাতা: উচ্চ শিক্ষায় পড়ুয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপে জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে রাজ্য৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৭তম স্থানে আছে রাজ্য৷ ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষেই উঠে এসেছে এই তথ্য৷ পরিসংখ্যানেও প্রকাশ, গত ছ’বছরে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের নথিভুক্তকরণ ৬ শতাংশ বেড়েছে কিন্তু স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় গড় যেখানে ১৯.৪০ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা ১৬.৩২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী৷ তবে সংরক্ষিত বিভাগে রাজ্যে অন্তত ৫৯ শতাংশ পড়ুয়া এই আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন৷
বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ স্তরে রাজ্য, কেন্দ্রের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে৷ গবেষণা কিংবা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে পড়ুয়ারা এই স্কলারশিপ পান৷ গত শিক্ষাবর্ষে কতজন এই আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন, তার হিসেব কেন্দ্রীয় পোর্টালে জমা পড়েছে৷ সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট স্কলারশিপ পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ২৩২ জন৷ তার মধ্যে ছাত্রীরা অনেকটাই এগিয়ে৷ ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৭৬ জন ছাত্রীর তুলনায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫৬ জন ছাত্র এই আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন৷
যদিও পুরো শিক্ষাবর্ষের নিরিখে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ২০ লক্ষের বেশি৷ সংরক্ষিত এবং অংসরক্ষিত বিভাগের মধ্যেও এই ব্যবধান রয়েছে যথেষ্ট৷ যেমন এই স্কলারশিপ পেয়েছেন, এমন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৭১২ জন৷ ২ লক্ষ ১ হাজার ৫২০ জন সংরক্ষিত বিভাগের পড়ুয়া এই সুবিধা পেয়েছেন৷ একনজরে দেখে নেওয়া যাক দেশের অন্যান্য রাজ্যের পরিসংখ্যান কি বলছে? চলতি শিক্ষাবর্ষে সবচেয়ে বেশি স্কলারশিপ পেয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের পড়ুয়ারা৷ সেখানে ৪২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পেয়েছেন এই সুবিধা৷ তারপরেই তেলেঙ্গানা ৪১ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশ ৩০.৫৩ শতাংশ, মহারাষ্ট্র ২৯.০৮ শতাংশ, কর্ণাটক ২৮.৯১ শতাংশ৷ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গুজরাত,ছত্তিশগড়,তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যও৷ জাতীয় গড়ে দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে এই আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন ৬ কোটি ৭ লক্ষ ৯২ হাজার ১১৩ জন৷ তবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, এমন পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৫ কোটি ১ লক্ষ ৪ হাজার ৮০ জন৷
রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান পবিত্র সরকারের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের পরিসংখ্যান অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে৷ উত্তরপ্রদেশে আমাদের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি৷ উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল পরীক্ষায় পাশের হারও বেশি৷ ফলে স্নাতকে ভর্তিও বেশি৷ আবার কেরালায় স্বাক্ষরতার হার অন্য সব রাজ্যের চেয়ে বেশি৷’’ প্রাক্তন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরীর আবার পর্যবেক্ষণ, ‘‘প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে৷ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হালও তথৈবচ৷ সেই সঙ্গে নিত্যদিন কলেজে-কলেজে অশান্তি৷ তা ছাড়া নতুন শিল্প ও কলকারখানা কোথায় ? উচ্চশিক্ষার পর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা না থাকায় পড়ুয়ারা ভিন্ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন৷ সে জন্যই উচ্চশিক্ষায় জিইআর কমছে৷’’
এদিকে শিক্ষামহলের একাংশের মতে, রাজ্যে বহু কেন্দ্রীয় স্কলারশিপের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে৷ অনেক প্রকল্পের টাকা বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে৷ তাছাড়া আবেদন করার পরও সময় লেগে যায় তা পেতে৷ তাই হয়তো সংখ্যার রকমফের হয়েছে৷ তবে আবেদন করার পরের প্রক্রিয়া আর মসৃণ হলে আগামীদিনে স্কলারশিপের হার আরও কিছুটা বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে৷