লাটে প্রাথমিক শিক্ষা, চলছে শিক্ষা বহির্ভূত কাজ! বিদ্রোহ এবার শিক্ষক মহলে

প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা অবহেলিত! পঠন-পাঠন লাটে তুলে শিক্ষা বহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের ব্যস্ত রাখা হচ্ছে বলে এবার সরাসরি শিক্ষা দপ্তরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষকদের একাংশের৷

কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা অবহেলিত! পঠন-পাঠন লাটে তুলে শিক্ষা বহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের ব্যস্ত রাখা হচ্ছে বলে এবার সরাসরি শিক্ষা দপ্তরের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষকদের একাংশের৷

এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারীর মন্তব্য, দশকের পর দশক ধরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয়ে যায় সে শিক্ষার রইল কি? রাজ্যের প্রায় হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নেই। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শ্রেণী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ নেই। প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কোথাও কম্পিউটার নেই, ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যবস্থা নেই, কোন ক্লার্ক নেই, গ্রুপ ডি কর্মী নেই, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। অথচ বর্তমানে প্রতিটি বিদ্যালয়কে শিক্ষা দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিসিএফ অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্ত ডাটা অনলাইনে পূরণ করতে হবে। দু, তিনজন শিক্ষক শিক্ষিকা যুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বাধ্য হয়ে অন্যত্র সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ডাটা ফিলাপের জন্য সময় দিতে হচ্ছে। শিক্ষা দপ্তর থেকে অহরহ এমন নির্দেশ প্রতিনিয়তই আসছে যা যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছেন এইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ। ফলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাগণ পঠন-পাঠনের জন্য কোনো সময় দিতে পারছেন না। আর এক, দুই জন সহশিক্ষক বা শিক্ষিকা কোনো কারণে অনুপস্থিত হলে বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়। এর উপর কোন শিক্ষিকা যদি সিসিএল-এ থাকেন তাহলে তো কোন অবস্থাতেই বিদ্যালয় চালু রাখা সম্ভব নয়। শিক্ষাদান অপেক্ষা শিক্ষা বহির্ভূত কাজ গুলিকেই বেশি করে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মিড ডে মিল, ভোটার লিস্ট, ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাগ, জুতো ইত্যাদি শিক্ষা বহির্ভূত কাজে অধিকাংশ সময় নিয়োজিত রাখা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক মান উন্নয়ন না ঘটিয়ে আচমকা ২-৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা যুক্ত পরিকাঠামো হীন বিদ্যালয় গুলিকে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হলো। এর মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ছাত্র-ছাত্রীরাই।

তাঁর আরও দাবি, আমরা দাবি করছি রাজ্যের প্রতিটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলির উপযুক্ত পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, বিদ্যালয়ে ক্লার্ক, গ্রুপ ডি কর্মচারী নিয়োগ এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। পরিকাঠামো হীন প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিকে কোনোভাবেই পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা চলবে না।

কিংকরবাবুর আরও মন্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে অবহেলিত। এইসব উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় অভিভাবকগণ বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয় পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষার ভিত হলো প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। সেটাকেই আজ নড়বড়ে করে দেওয়া হচ্ছে। সরকার সুকৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্রমশ বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক যাতে ভবিষ্যতে কোনো অভিভাবককে বাধ্য হয়ে তাঁদের সন্তানকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *