হাসনাবাদ: ছোট হোক বা বড় স্বপ্ন তো স্বপ্নই হয়৷ ছোটদের ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নগুলোই একদিন অনেক বড় আকারে বিস্তারিত হয়৷ সমাজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে৷ এই খুদেদের স্বপ্নগুলোকেই সাজিয়ে গুছিয়ে দিতে ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছেন পেশায় টোটোচালক বিষ্ণুপদ মণ্ডল৷ রেল বস্তির বাচ্চাদের জন্য সাধ্যমত একটা স্কুল বানিয়েন তিনি৷ আসলে এখন টোটো চালান ঠিকই তবে একসময় নিজেও পড়াশোনা করতেন৷ দারিদ্রতার চাপে পড়াশোনার খরচ যোগাতে নিজেও একসময় ছোটোদের পড়িয়েছেন৷
দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেই টাকি কলেজে থেকে স্নাতক হয়েছেন৷ সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাগিদ অনুভব করেন দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে এমন বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ গড়ার৷ শুরু করেন হাসনাবাদ স্টেশন সংলগ্ন বস্তির দরিদ্র পরিবারগুলির ১৮ জন বাচ্চাকে নিয়ে৷ বছর দুয়েক আগে রেললাইনের ধারেই এক কামরার একটা ঘরে ওই বাচ্চাদের জন্য পড়াশোনার জায়গা করে দেন বিষ্ণুপদ বাবু৷ একটা দুটো করে চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ কিনেছেন৷ পড়ুয়াদের বই খাতা, পোশাকও কিনে দিয়েছেন৷
তারপর ধীরে ধীরে সেই ঘর থেকে গড়ে উঠেছে 'আশালতা নার্সারি ও কেজি স্কুল'৷ বর্তমানে এখানে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ৷ টোটো চালিয়ে যাকিছু রোজগার করেন তার প্রায় সবটাই খরচ করে দেন এই স্কুলের জন্য৷ সাধ থাকলেও সাধ্য কম৷ তাই আপাতত দু’জন শিক্ষিকা প্রতিমা মণ্ডল ও সোনালি সেনগুপ্তের হাতেই এই বাচ্চাদের পড়ানোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন৷ খুদে পড়ুয়াদের দেখাশোনা করার জন্য একজন আয়াও আছেন শিবানী বসু৷ সামান্য সাম্মানিকেই খুশি মনে এই ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ান ও দেখাশোনা করেন৷ পেশায় একজন টোটো চালক হয়েও বিষ্ণুপদ বাবুর এই প্রচেষ্টার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁরা৷
তবে তিনি একা নন৷ তাঁর এই মহৎ উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন অসীম মণ্ডল, বলাই গাইন, নিরঞ্জন গাঁতিদারের মত আরও কয়েকজনকে৷ তাঁরা পেশায় কেউ চা বিক্রেতা, কেউবা দিনমজুর৷ বিষ্ণুপদ বাবুদের এই উদ্দম দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন টাকির প্রাক্তন পুরপ্রধান অরুণ ঘোষ৷ বাচ্চাদের সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণুপদ বাবুও আরও বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ আরও বড় স্কুল, আরও অনেক দুস্থ বাচ্চাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে এখন প্রয়োজন শুধু আরও একটু সাহায্যের৷