অমানবিকতার নির্লজ্জ নিদর্শন, নীলরতনে মা কুকুরে খোবলানো চোখ ও ১৬টি দেহ ঘিরে উত্তাল শহর

শাম্মী হুদা: নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্ধার হওয়া ১৬টি কুকুর ছানার দেহকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা শহর। কীকরে শহরের নামী হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে একেবারে সুপারের এফিসের সামনে মৃত কুকুর ছানাগুলিকে কেউ ফেলে গেল আর গোটা হাসপাতালের কোনও কর্মীরই তা নজরে এল না, এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতালে সাধারণত মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার

অমানবিকতার নির্লজ্জ নিদর্শন, নীলরতনে মা কুকুরে খোবলানো চোখ ও ১৬টি দেহ ঘিরে উত্তাল শহর

শাম্মী হুদা: নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্ধার হওয়া ১৬টি কুকুর ছানার দেহকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা শহর। কীকরে শহরের নামী হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে একেবারে সুপারের এফিসের সামনে মৃত কুকুর ছানাগুলিকে কেউ ফেলে গেল আর গোটা হাসপাতালের কোনও কর্মীরই তা নজরে এল না, এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতালে সাধারণত মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য চিকিৎসা করাতে আসে,সেই হাসপাতাল চত্বরেই এত বড়মাপের ঘটনা ঘটায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও। কারোর কারোর দাবী হাসপাতালের প্রশিক্ষণ রত হবু চিকিৎসকরা এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন নার্স ও আয়াদের মধ্যে থেকেই কেউ বা কারা এই কুকুরছানা গুলির মৃত্যুর জন্য দায়ী। সবমিলিয়ে বড়সড় প্রশ্নের মুখে নীলরতন সরকার হাসপাতালের ভাবমূর্তি ও মানবিক চেহারা।

উল্লেখ্য, এতো গেল রবিবার দুপুরের কথা। ওইদিন রাতেই হাসপাতালের কুকুর মারার এক ভয়াবহ ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় ঢিঢি পড়েছে সর্বত্র। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে দুই মহিলা মুখে চাদর ঢাকা দিয়ে একটি মা-কুকুরকে বেধড়ক মারধর করছেন। নিরন্তর লাঠির ঘায়ে পরিত্রাহি চিৎকার জুড়েছে সেই সারমেয়, বলাবাহুল্য সেই কান্নায় লাঠিধারীদের মধ্যে কোনও হেলদোল নেই, বরং পূর্ণ উদ্দমে তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নৃশংসতার তখনও অনেক বাকি, মারের চোটে সারমেয়র চার পায়ের হাড় ভেঙেছে,চোখ খুবলে নেওয়া হয়েছে। তারপর মা-কে ছেড়ে একেএকে ছানাদের মারধর শুরু হয়েছে। মা-কে মারার সময়ই ছানাগুলি আশপাশেই কাঁদছিল। দুই মহিলা তাদেরও রেয়াত করেনি।বেধড়ক মেরেছে। মারের দাপটেই ছানাদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।তবে ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার আগে পর্যন্ত মনে করা হচ্ছিল বিষ মেশানো খাবার খাইয়েই এই নারকীয় হত্যালীলা চালানো হয়েছে। তবে সবটাই এখন তদন্ত সাপেক্ষ। হাসপাতাল সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কে বা কারা এই জঘন্য কাজ করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রকৃত দোষীকে খুঁজে বের করতে প্রয়োজনে তদন্ত হবে।

রবিবার দুপুরে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মীর স্ত্রী প্রথমে বেশ কয়েকটি মুখবন্ধ কালো প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখেন সুপারের ঘরের সামনে। পাশেই আহত অবস্থায় পড়েছিল মা-কুকুরটি। তাঁর সন্দেহ হওয়ায় বন্ধ প্লাস্টিকের একটি মুখ খুলতেই নিথর ছানারা দৃশ্যমান হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চেঁচামেচি শুরু করেন হাসপাতাল চত্বরে ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠনের কর্মীরা। একে একে প্রতিটি প্লাস্টিকের মুখ খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ১৬টি কুকুর ছানার দেহ। প্রত্যেক প্যাকেট থেকেই দেহর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে খাবারের ভগ্নাংশ। প্রথমে মনে করা হয়েছিল বিষ খাইযে ছানাগুলিকে মেরে ফেলা হয়েছে। গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে হাসপাতালের দিকেই। কেননা কালো প্লাস্টিকগুলি সাধারণত মেডিক্যাল বর্জ্য ফেলেতে নার্স আয়া ও ইন্টার্ন ডাক্তাররা ব্যবহার করেন। এতবড় কালো প্লাস্টিক সাধারণ বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকে না। এখন প্রশ্ন,কী এমন ঘটল যাতে এতগুলি নিরীহ কুকুর ছানাকে এভাবে মেরে ফেলা হল? যাঁরা এভাবে অবলা জীবকে মেরে ফেলতে পারে তাঁদের কাছে মনুষ্যসন্তান কতটা নিরাপদ? এই আলোচনা বিতর্ক সাপেক্ষ। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে রবিবার বেলার দিকে দুটি মহিলাকে মুখবন্ধ কালো প্লাস্টিক হাতে হাসপাতাল চত্বরে দেখা গিয়েছে। তারাই সম্ভবত সেগুলি সুপারের ঘরের সামনে ফেলে রেখে যায়। অমানবিকতার এই নির্লজ্জ নিদর্শন দেখে কেঁপে উঠেছেগোটা শহর,সেবা নাকি হত্যা কোনটা যে হাসপাতাল কর্মীদের পরম ধর্ম তা আর বোঝা যাচ্ছে না। এদিকে অসুস্থ মা কুকুরটির চিকিৎসা শুরু হলেও এদিন তার মৃত্যু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × two =