তিয়াষা গুপ্ত: পুণ্যার্জন আর গঙ্গাসাগর যদি সমার্থক করে দেখতে হয়, তাহলে এখানে একবার না এলে চলে না। ঐতিহ্য আর প্রাচীনতা সঙ্গে নিয়ে শুরু হল স্নানযাত্রার মেলা। মকর সংক্রান্তির সকাল থেকেই চলছে পুণ্যস্নান। এত মানুষের একসঙ্গে মিলনভূমি এই গঙ্গাসাগর। তাই কড়া প্রশাসন। ড্রোন ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। পুলিশ কুকুর দিয়ে চলছে তল্লাশি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছেন মেলায়। সাগরের জলে স্নান করে কপিল মুণির আশ্রম দর্শন করে ও পুজো দিয়ে পুণ্যলাভের আশায় এখানে প্রতিবারই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। মেলার গায়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছ। এই নিয়ে সাধু সন্তদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাও এর আকর্ষণ অমোঘ-অপার।
বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকেও অবাঙালিরা আসেন। সেই কারণে গঙ্গাসাগরকে ঘিরে এখন পর্যটন ব্য়বসা জমে উঠেছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলি হল –
কপিল মুণির আশ্রম
লোক কাহিনি অনুসারে এখানে কপিল মুণির একটি আশ্রম ছিল। একসময়ে সেটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এখানে ভক্তসমাগম বাড়তে থাকে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তির পুণ্যতিথিতে লাখো মানুষের সমাগম হয়।
সাধু-সন্ত ও পুণ্যলাভ
কথিত আছে,এখানে হিমালয় থেকে সাধুসন্তরা আসেন। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ছাইভস্ম গায়ে মেখে অনাবৃত অবস্থায় তাঁরা ধর্মীয় আচার পালন করে চলেছেন। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে আড়ম্ভ করে সেবামূলক কাজ করে।
প্রযুক্তি নির্ভর মেলা
প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে গঙ্গাসাগর মেলায়। প্রতিবছর এখানে প্রচুর মানুষ আসেন। ফলে মোবাইল টাওয়ার কনজেশন ও কল ড্রপস একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা মেটাতেই `সেল অন হুইলস’ (কাউ) –নামে এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলায় এবার মোবাইল টাওয়ার পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
কাব্যে, পুরাণে গঙ্গাসগরের উল্লেখ আছে। প্রাচীণতা ছাপিয়ে গঙ্গাসাগর মেলায় আধুনিকতা ছোঁয়া লেগেছে। ইতিহাস অজানা থেকে যেতে পারে, কিন্তু মুছে যেতে পারে না। তাই ঐতিহ্য, লোকগাঁথা আর ইতিহাসকে ভর করে প্রাচীনতা সঙ্গে নিয়ে গঙ্গাসাগর আগামী দিনে আরো মানুষের ঠিকানা হোক। এবার লাখো মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জমজমাট গঙ্গাসাগর।