বেসরকারি স্কুলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে ও সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করে তুলতে বদ্ধপরিকর রাজ্য। তাই রাজ্যজুড়ে স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে একের পর এক পদক্ষেপ করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। সোমবার বিধানসভায় এনিয়ে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্কুল সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে বিগত ৮ বছরে রাজ্যে ২ হাজার ৯৭৫টি নতুন স্কুল তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে রাজ্যে ১১১ টি সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলকে ইংরেজি মাধ্যম করা হয়েছে। আরও বেশ কিছু স্কুলে এই পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়া চলছে।
রাজ্যের স্কুলগুলির অচলাবস্থা কাটাতে স্কুলে ছাত্র শিক্ষকের সংখ্যা সঠিক পরিসংখ্যান রাখতে সরকার অনলাইনে তথ্য নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। একইসঙ্গে সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে কোথায় কত শিক্ষক ছাত্র রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্যে শিক্ষক ছাত্র অনুপাতের সংখ্যাও এদিন বিধানসভার সদস্যদের সামনে প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, রাজ্যের স্কুলগুলিতে প্রথমিকে প্রতি ২০ জন প্রতি একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা। উচ্চ-প্রাথমিকে প্রতি ৪১ জন পড়ুয়া প্রতি একজন শিক্ষক বা শিক্ষাকা আছেন। মাধ্যমিকে প্রতি ৪১ পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা ও উচ্চ-মাধ্যমিকে প্রতি ৪৯ জন পড়ুয়া প্রতি ১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলকাতায শহরে প্রায় ২০০ এমন স্কুল ছিল যেখানে একজনও পড়ুয়া ছিল না, সেই সংখ্যাও কমানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, ক্লাব বা এই ধরনের সংগঠনের অধীনস্থ শিক্ষাকেন্দ্র বা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থা সম্ভব নয়। তবে এর নিকটবর্তী স্কুলগুলির সঙ্গে এইধরনের শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ৬০ বছর বয়সী যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের অনেকেই প্যারা টিচারের বিকল্প নিতে পারেন।
এদিন ফের একবার রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের হাজিরা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষক থাকলেও আদৌ ক্লাস হচ্ছে কিনা বোঝার উপায় নেই। কারণ শিক্ষকরা কেউ যদি উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করে বেরিয়ে যান তাও তাঁদের উপস্থিতি গ্রাহ্য হয়। শিক্ষকদের এই অভ্যাস দীর্ঘদিনের । তবে গায়ের জোরে কিছু বদল করতে চায় না সরকার। তাই এনিয়ে সব স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়েই এই প্রসঙ্গে কথা বলবেন এবং কী ভাবে এই অভ্যাসে বদল আনা যায় তার উপায় খুঁজতে হবে বলেও বিধানসভায় জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সবমিলিয়ে এই ৮ বছরে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে এবং উন্নতিকরণ হয়েছে বলেই দাবি শিক্ষামন্ত্রীর।