কলকাতা: করোনা সংক্রমণ রুখতে তৎপর রাজ্য সরকার৷ ইতিমধ্যেই একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে৷ ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়৷ স্কুলগুলিকে নিজস্ব পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷ তবে বোর্ডের পরীক্ষা বন্ধ হবে না বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ড তাদের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই প্রশ্ন উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডও কি একই পথে হাঁটবে? এবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
আজ শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করা হবে না৷ সিবিএসই ও আইসিএসই বোর্ডের পথে হাঁটবে না পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক সংসদ। নির্ধারিত পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ২৭ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে৷ সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘চারটি পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে৷ তাই এখন আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করা সম্ভব নয়৷ খুব প্রয়োজন না হলে নির্ধারিত সূচি মেনেই চলবে উচ্চমাধ্যমিক৷”
ওই সংবাদমাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকার থেকে কোনও নির্দেশ না এলে পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের পক্ষে একা নেওয়া সম্ভব নয়৷” তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে সংসদের তরফে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে৷ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যাতে ১ মিটার দূরত্ব থাকে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ করোনা মোকাবিলায় পথে নেমেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এসএফআই)৷ বৃহস্পতিবার রাজ্যের বেশ কিছু পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করে তারা৷
স্কুল ছুটির নির্দেশ উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজের সমস্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও কার্যজর করারও দাবি উঠতে শুরু করেছে শিক্ষক মহলের একাংশের মধ্যে৷ শিক্ষকদের একাংশের যুক্তি, ১৯৯৭ সালের মাধ্যমিকের গণিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ায় নির্ধারিত দিনের বদলে প্রায় একমাস পরে নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা হয়েছিল৷ আর ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ১৬ মার্চ বনধ ডেকেছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল৷ ওই দিন ১৬ মার্চ থেকে শুরু হতে চলা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পিছিয়ে যায়৷ ওই দিনের প্রথম ভাষার পরীক্ষাটা হয়েছিল একদম শেষে ১৮ এপ্রিল৷
উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা সূচি বদলের দাবি ইতিধ্যেই শিক্ষামন্ত্রীর দরবারে তুলে ধরেছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র৷ পরীক্ষাসূচি বাতিলের দাবি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির শিক্ষকনেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস নিয়ে এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর সাথে এই বাংলায় যে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অবিলম্বে স্থগিত রাখা যায় কি না, জরুরি আলোচনায় বসুক রাজ্য সরকার ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও সংসদ৷’’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এক স্কুল শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাইরের স্কুলের ছাত্ররা আসে৷ তাদের ঠিকানা খোঁজখবর জানা থাকে না৷ খোঁজ খবর নেওয়াও মুস্কিল৷ এমনকী অসুস্থ অবস্থাতেও তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়৷ তাই সত্যিকারের সংক্রমণ নিয়েও কেউ পরীক্ষা দিলেও আমরা অন্ধকারে থাকব৷ আর পরীক্ষা চলবে ২৭ মার্চ অবধি৷ ১ এপ্রিল স্কুল খুললে পরীক্ষার জন্য চালু থাকা স্কুল শিক্ষকদের থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না কেউ নিশ্চিত করতে পারেন? একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে ১৯ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের অভিভাবক, পরিদর্শক ও পুলিশ৷ বোর্ডের পরীক্ষা চলছে৷ করোনা যে এঁদের ছোবে না, প্রশাসন কী নিশ্চিত?’’ কিন্তু, সেই সমস্ত জল ঢেলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন শিক্ষামন্ত্রী৷