কলকাতা: মহামারী করোনা পরিস্থিতির রুখতে কেন্দ্রের সুপারিশ অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার৷ বাংলার ২৩ জেলায় একাধিক শহরে জারি লকডাউন রাখার ঘোষণা করা হয়েছে৷ স্বাস্থ্য, জরুরি পরিষেবা ও খাদ্যপণ্যকে এর বাইরে রাখা হয়েছে৷ কিন্তু বাংলার বিভিন্ন শহর তালাবন্দি করার ঘোষণা করা হলেও ছাড় পেলেন না বাংলায় শিক্ষকরা৷ লকডাউনের মধ্যেও স্কুলে মিড-ডে-মিলের চাল-আলু বিলির করবেন তাঁরা৷ আর তার জেরেই শিক্ষক মহলে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে শিক্ষামহলে৷ মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও দরবার করছেন তাঁরা৷
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই বাংলা সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড ডে মিলের চাল-আলু বিলি করার কথা রয়েছে শিক্ষকদের৷ সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, শিক্ষকরা অবশ্যই এই কাজ করবেন৷ বাড়ি থেকে স্কুলদূরবর্তী স্থানে হলে, সেই সমস্ত শিক্ষকদের ছাড় দেওয়া হবে৷ তবে, স্কুলের কাছাকাছি থাকা শিক্ষকরা এই কাজে অবতীর্ণ হবেন৷ তাঁরা স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের চাল-আলু বিলিবন্টন করবেন৷ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর শিক্ষকদের দিয়ে চাল-আলু বিলির ঘটনাকে কেন্দ্রে শিক্ষক মহলে তুমুল উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে৷ এই নিয়ে সরব হয়েছেন একাধিক শিক্ষক সংগঠনের নেতৃত্ব৷
মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের শিক্ষা বিভাগ থেকে অবিলম্বে নির্দেশ জারি করা হোক যাতে আগামী সোমবার ২৩ তারিখ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই নিজেদের বাড়িতে সুস্থভাবে থাকার চেষ্টা করেন৷ কোন কারণে তারা যেন বিদ্যালয় না আসেন, বাইরে না বেরোন৷ করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্প্রসারণ অতি দ্রুত ঘটছে৷ এই পরিস্থিতিতে আপনার কাছে আবেদন, আপনি আগামীকাল রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয় থেকে চাল ও আলু অভিভাবকদের কাছে সরবরাহ করার যে কর্মসূচি ছিল তা স্থগিত রাখুন৷’’
শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা দপ্তরে যে চিঠি পাঠিয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে চাল-আলু বিলি বা শিক্ষা বিষয়ক কাজে অবিলম্বে বাতিল করা হোক৷ বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই স্কুল খোলা রেখে চাল-আলু বিলির নির্দেশিকা বাস্তবায়িত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও অভিভাবকদের জন্যও বিপজ্জনক৷ এমনিতেই লকডাউনের জন্য গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে৷ তাতে শিক্ষকরা কীভাবে স্কুলে পৌঁছবেন? বাংলার বিভিন্ন শহরে লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা উচিত৷’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াদের চাল-আলু দেওয়া সংক্রান্ত শিক্ষা দপ্তরের একটি নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি৷ ব্যারাকপুর, মালদা-সহ একাধিক জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক চাল-আলু দেওয়ার নির্দেশিকা স্থগিত করেছেন৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মত সমস্ত স্কুলের রান্নার কাজে নিয়োজিত স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে আগামীকাল বিকেল তিনটের মধ্যে চাল-আলু দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করবেন৷’’
স্কুলে চাল ও আলু বিলির ব্যবস্থা স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি৷ শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা জানিয়েছেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ রুখতে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন করে যাতায়াত ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ করা হয়েছে৷ সকলকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ এহেন পরিস্থিতিতে আগামী ২৩, ২৪ মার্চ বিদ্যালয়ে চাল ও আলু বিলির ব্যবস্থা স্থগিত রাখা উচিত৷’’