পড়ুয়াদের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রোজেক্ট বাধ্যতামূলক ঘোষণা বোর্ডের

পড়ুয়াদের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রোজেক্ট বাধ্যতামূলক ঘোষণা বোর্ডের

নয়াদিল্লি: বিষয়ভিত্তিক লেখা পড়ার একঘেয়েমি কাটিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের কাছে প্রতিটি বিষয়কে আরও আকর্ষণীয় ও আনন্দদায়ক করে তুলতে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই বাধ্যতামুলক হচ্ছে শিল্প-সমন্বিত শিক্ষা বা আর্ট ইন্টিগ্রেটেড লার্নিং সাধারণভাবে স্কুল প্রোজেক্ট বলেই পরিচিত৷ বৃহস্পতিবার, এই সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করল সেন্ট্রাল বোর্ড অফ এডুকেশন (সিবিএসই)। নির্দেশিকা অনুযায়ী, সিবিএসই বোর্ডের স্কুলগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করবে। আর এই প্রোজেক্টের মধ্যে অন্তত একটি প্রোজেক্ট হবে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে৷

শিক্ষার্থীদের নানান আঙ্গিকে শিল্পকলা যেমন নাচ,গান, ছবি আঁকা,হাতের কাজের সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে বিষয়ভিত্তিক প্রোজেক্ট রাখতেই হবে যা এই সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হতে পারে। সিবিএসই বোর্ডের ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত কমপক্ষে একটি করে প্রোজেক্ট যেকোনো বিষয়ের ওপর হতে পারে। তবে ক্লাস নাইন ও টেনের  শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি প্রোজেক্ট রাখতে হবে যা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হবে।

সিবিএসই-র বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে আর্ট-ইন্টিগ্রেটেড লার্নিংকে শিক্ষা সরঞ্জাম হিসাবে চালু করা হয়েছিল, সাধারণভাবে শিল্প দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নয়। এই পদ্ধতি বিভিন্ন বিষয়কে আরও ভালভাবে শেখানো এবং শেখার একটি উপায় ছিল। আর্ট ইন্টিগ্রেশন বা শিল্প সমন্বয় হল বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরণের শিল্প পদ্ধতির ব্যবহার। সিবিএসইয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, “প্রতিটি স্তরে শিক্ষাদান এবং শিক্ষা প্রক্রিয়ার সঙ্গে ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটলে তা ভারতীয় নীতিবোধকে আত্মস্থ করতে সহায়তা করবে।”

“এই শিল্প-সমন্বিত পদ্ধতি শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে,” বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিবিএসইয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সিবিএসইর শিক্ষার্থীরা পরিচালিত আর্ট-ইন্টিগ্রেটেড প্রোজেক্টের গাইডলাইনগুলি হল:

 

১. ক্লাস ওয়ান থেকে  ক্লাস এইটের জন্য, শিল্প সমন্বিত প্রোজেক্ট গুলি ট্রান্স-ডিসিপ্লিনারি প্রকৃতির হবে। প্রোজেক্টের ক্ষেত্রে একাধিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে।

২. সিবিএসইর নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য সমস্ত বিষয়গুলি সার্বিকভাবে বুঝতে পারার অঙ্গ হিসাবে প্রতিটি বিষয়ে প্রোজেক্ট তৈরী করতে হবে।

৩. যেহেতু শিল্প সমন্বিত শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হ'ল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করা, তাই সিবিএসইর শিক্ষার্থীদের তৈরী প্রোজেক্টগুলিতে ভারতীয় শিল্পের সমন্বয় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের এই প্রজেক্টের গঠনমূলক শিক্ষাদান এবং এর ব্যবহারিক দিকটিও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতে হবে।

৪.ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত সিবিএসইর শিক্ষার্থীদের প্রোজেক্টের মধ্যে ন্যূনতম একটি এমন প্রোজেক্ট বেছে নিতে হবে যেখানে যুগ্মভাবে ভারতীয় রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং যার মাধ্যমে “এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত”-এই বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির সিবিএসই শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সিকিমের শিল্প-ধারা সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে।

 

৫. আর্টের  শিক্ষকদের সঙ্গে সাবজেক্ট শিক্ষকদের অবশ্যই প্রকল্পগুলি পরিকল্পনা এবং আলোচনা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

৬. সিলেবাসের বাইরে নানান ধরনের নতুন বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা উচিত বলেও গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এইসমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় সরাসরি যোগদানের  অভিজ্ঞতা লাভের জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই বিষয়গুলি সম্পর্কিত সহায়তা দিতে হবে।

৭.সিবিএসই আর্ট ইন্টিগ্রেটেড প্রোজেক্টগুলি ক্ষেত্রে  অভিভাবকদের কোনও আর্থিক চাপ সৃষ্টি না করে সহজেই উপলব্ধ স্থানীয় সংস্থানগুলি ব্যবহার করতে হবে যা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে হবে।

৮. প্রোজেক্টের কাজের জন্য শিক্ষকরা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ছবি বা শিল্পকলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন।

৯.প্রতিটি প্রোজেক্টর জন্য চার থেকে পাঁচ জনের গ্রুপ তৈরী করতে হবে।

১০. শিল্প সমন্বিত প্রোজেক্ট  তৈরি করার সময়, এটি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শিল্পের দিকটি যেন এত উঁচু মানের

 না হয় যেখানে শিক্ষার্থীদের গাইড করার জন্য নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কোনো সুযোগ থাকবে না। শিল্পী বা আর্ট শিক্ষকদের সহায়তা ছাড়াই যেন সহজেই এটা করা সম্ভব হয়।

১১. প্রোজেক্টর বিষয়গুলি প্রাসঙ্গিক এবং শিক্ষার্থীদের বয়স অনুসারে হতে হবে।

১২.প্রোজেক্টের পরিকল্পনা করার সময় এর মান এবং নিয়মবিধির বিষয়ে যেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে মূল্যায়ন করতে পারে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রোজেক্টের কাজ শুরু করার আগে এর নির্দিষ্ট মান এবং সর্বোচ্চ নম্বর সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিতে হবে।

১৩. সিবিএসই স্কুল এবং শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রোজেক্টর কাজের জন্য নির্দিষ্ট  তারিখ এবং মাস নির্ধারণ করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরী করতে হবে। পাশাপাশি এই প্রোজেক্টর মূল্যায়নের রেকর্ড বজায় রাখতে হবে।

১৪.  সিবিএসই-র শিক্ষার্থীদের শিল্প-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে অংশ গ্রহণ এবং প্রতিটি বিষয় থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলি তাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হবে।

১৪. দশম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে এই প্রোজেক্টর জন্য প্রদত্ত নম্বরগুলি সিবিএসই দ্বারা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের জন্য দেওয়া নম্বর আপলোড করার সময় সংগ্রহ করার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + sixteen =