আরও জটিল কলেজ-জট! পরীক্ষা বিতর্কে বৈঠক ডাকলেন রাজ্যপাল

আরও জটিল কলেজ-জট! পরীক্ষা বিতর্কে বৈঠক ডাকলেন রাজ্যপাল

 

কলকাতা: কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা আগেই বাতিল ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার৷ অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হবে তাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল৷ সেই মর্মে শুরু হয়ে গিয়েছিল মূল্যায়ন প্রক্রিয়া৷ কিন্তু আচমকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশিকায় ঘিরে তৈরি হয়েছিল জটিলতা৷ চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্র পরীক্ষা নিতে চাইলে রাজ্য কী করবে? তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি৷ বাংলার কলেজ পড়ুয়াদের সেই বিভ্রান্তি কাটাতে এবার মাঠে নামার ঘোষণা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর৷ পরীক্ষা জট কাটিয়ে সমস্যা সমাধানে হেস্তনেস্ত চেয়েছেন তিনি৷

রাজ্য-রাজ্যভবন সংঘাত পর্বে আচার্যের ক্ষমতা বেশ খানিকটা রঘু করা হয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যপাল৷ রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালেয়র সাংবিধানিক প্রধানের ক্ষমতা লঘুকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতির ময়দানে কম কাদা ছোড়াছুড়ি হয়নি৷ এবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালেয়র পরীক্ষা জট কাটাতে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বার্তা দিয়েছেন ধনকর৷ প্রয়োজনে ইউজিসি ও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলেও টুইটে নিজের অবস্থান জানালেন রাজ্যপাল৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে আজ দুপুরে টুইট করে রাজ্যপাল লেখেন, ‘‘বিভিন্ন সূত্র থেকে ছাত্রদের উদ্বেগের কথা আমাকে জানানো হয়েছে৷ ১৫ জুলাই উপাচার্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের পর  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলব৷ সমাধান জরুরি। প্রয়োজনে UGC এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব। আমি ছাত্রদের প্রতি দায়বদ্ধ।’’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতির পর ইউজিসি ও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের জারি করা পরীক্ষা বিধি নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তা এখনও সরকারি ভাবে স্পষ্ট হয়নি৷ পরীক্ষা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে গোটা বিষয়টির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ছেড়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী পদক্ষেপ নেবে? রাজ্য সরকার কী ভাবছে? তা স্পষ্ট হওয়ার আগেই এবার সমস্যা সমাধানে মাঠে নামার বার্তা দিলেন রাজ্যপাল৷ কিন্তু, রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের মধ্যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়েও রাজনীতি হবে না তো? যদিও শিক্ষা কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বিষয়৷ সেক্ষেত্রে কন্দ্রের নির্দেশ রাজ্য সরকার পালন করবে? না কি আগের মূল্যায়ন বিধি কার্যকর হবে? এই নিয়ে তৈরি হওয়ার ধোঁয়াশার মধ্যে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ, রাজনীতির সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাংলার কলেজ পড়ুয়াদের একাংশ৷ আশঙ্কা, এই নিয়েও কী এবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত হবে? সমস্যা সমাধানের বদলে যদি পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনীতি হয়, তাহলে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আশঙ্কা পড়ুয়াদের একাংশের৷ 

কেন্দ্রের নির্দেশ প্রসঙ্গদে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইউজিসি গাইডলাইন তিনি নিজে দেখেননি৷ গোটা বিষয়টি উচ্চশিক্ষা নজর রাখছে বলেও জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ পরীক্ষা হবে কী হবে না, আদৌ হবে কি না, এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ কলেজে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ওপর ছেড়ে দিতে চাইছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়গুলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ঠিক করবে, তারা কীভাবে পরীক্ষা নেবে৷ তবে, শিক্ষাদফতর সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন৷ উচ্চশিক্ষা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেই সময় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেওয়ার অ্যাডভাইজারি পাঠিয়েছি৷ যদি কোনও সিদ্ধান্ত হয় তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যা বলবে, সেই মতো কাজ হবে৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যা বলবে তাই হবে৷ আমরা যা পাঠানোর, পাঠিয়ে দিয়েছি৷ ইউজিসি নির্দেশিকা সংযোজন করা হবে৷  বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটায় সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা কথা বলব৷ আমরা জানাব৷ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব৷ আমরা ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি৷ আমাদের কাছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য হচ্ছেস, ছাত্ররা, ছাত্রীরা, শিক্ষকরা, অধ্যাপকরা, শিক্ষা কর্মীদের জীবন বাঁচানো৷ এবং একদিকে সেটি যেমন আছে, অন্যদিকে অ্যাডভাইসার ইতিমধ্যেই দিয়েছি৷ সেই মোতাবেক তারা কাজ করবে বলেছেন৷ যারা মাঝপথে আছে, তারা সিদ্ধান্ত নেবে৷ সমস্তটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷’’

অন্যদিকে, বিজ্ঞপ্তি জারি করে মানব উন্নয়ন সম্পদ মন্ত্রণালয় জানানো হয়েছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ব্যধতামূলক৷ একই সঙ্গে পরীক্ষা মূল্যায়ন এবং ভর্তি প্রক্রিয়া সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ক্যাম্পাসে হাজিরা দিতেও বলা হয়েছে৷ এতদিন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন৷ তাঁদের ফের ক্যাম্পাসে ডেকে পাঠানো হয়েছে৷ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যে ফাইনাল সেমিস্টার হওয়ার কথা, সেটা বাধ্যতামূলক৷ অর্থাৎ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই পরীক্ষা নিতে হবে৷ গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনো আপত্তি নেই৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকার পর ইউজিসি তরফেও জারি করা হয়েছিল বেশ কিছু গাইডলাইন৷ আজ আরও একধাপ এগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিতেই হবে৷ এমনকী এটাও বলা হয়েছে, যেহেতু শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা মূল্যায়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের কলেজে আসতে হবে৷ গোটা পরীক্ষায় হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে৷

কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, খাতা পেন নিয়ে বা পরীক্ষা হলে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না৷ বাংলার ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিগত পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া প্রায় চুড়ান্ত করে ফেলেছেন৷ পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ভিত্তিতে ২০ শতাংশ নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ এগিয়ে গিয়েছে৷ আর এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় নতুন করে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি৷ এমনিতেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ৷ গোটা জুলাই মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকছে স্কুল-কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ এর মধ্যে পরীক্ষা কীভাবে হবে, তা নিয়ে ইউজিসি তরফ একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল৷ সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গতকাল নির্দেশ জারি করে জানিয়েছিল, পরীক্ষা সেপ্টেম্বরের শেষে নেওয়া যেতে পারে৷ আজ একধাপ এগিয়ে কেন্দ্রের মানব-মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সেই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক৷ নিতে হবে সেই পরীক্ষা৷ যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা হবে৷ পরীক্ষা মূল্যায়ন ও পড়ুয়াদের একাডেমিক ভবিষ্যৎ গুরুত্ব দিয়ে এই পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে৷