হাওড়া: স্বামীর মৃত্যুর পর আকাশ ভেঙে পড়েছিল মাসুরা বিবির৷ ছোট ছোট ৩ সন্তানকে নিয়ে দিন গুজরান করবেন কীভাবে? তারমধ্যে এক সন্তান জন্ম থেকে শারীরিক ভাবে পিছিয়ে৷ এই অবস্থায় স্থানীয় একটা স্কুলে সাফাই কর্মীর কাজ শুরু করেছিলেন মাসুরা বিবি৷ ছোট সইদুলকে নিয়ে তিনি কাজে যেতেন৷ মা যখন কাজ করতেন, ছোট সইদুল দেখত, তার বয়সি ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে আসছে৷ তারও স্কুলে পড়ার ইচ্ছা হয়৷ শিক্ষিকদের সাহায্যে ভর্তি হয়ে যায় স্কুলে৷ সেই শুরু৷ দিন-রাত পরিশ্রম করে এবার ওই স্কুলের মাধ্যমিকের সর্বোচ্চ নম্বর ছিনিয়ে এসেছে সইদুল৷
সইদুলের পরিবার কেন, প্রতিবেশীরাও স্কুলের চত্বরে পা রেখেছে কি না সন্দেহ৷ প্রতি মুহূর্তে প্রতিকূলতা৷ সেই প্রতিকূলতাকে জয় করে সইদুল আলম আজ উলুবেড়িয়া হীরাগঞ্জের গর্ব৷ মাধ্যমিকে সকলকে তাক লাগিয়ে ৫৯৯ পেয়েছে৷ দিনে স্কুলের সাফাইকর্মী, পরে এসে ঘরের কাজ, রাত জেগে চলত জরির কাজ৷ অন্যদিকে, প্রতিবন্ধী ভাতা পায় বড় ছেলে৷ সব মিলিয়ে চার জনের সংসারে দিন আনা দিন খাওয়া৷ একবার খাওযার জুটত তো অন্যবেলা খাবার পাবে কিনা ঠিক থাকত না৷ খাবার বন্ধ থাকলেও সইদুলের পড়া কখনও বন্ধ থাকেনি৷ মায়ের জরির কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত তার পড়াশোনা৷
ভালো রেজাল্টে প্রতিবেশীদের পাশাপাশি যখন স্কুলের শিক্ষকদের মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে, তখন চিন্তায় সইদুল। হয়তো টিউশন ছিল না, হয়তো পাঠ্যবইয়ের বাইরে কিছু পড়তে পারেনি। স্কুলের শিক্ষকদের অফুরান ভালোবাসা ও সাহায্যে সাফল্যের প্রথম সিঁড়ি উতরে গিয়েছে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ চালাবে কি করে। তবে কী স্বপ্নের ইতি এখানেই। মাধ্যমিকের রেজাল্টের পর এই চিন্তাই কুরে কুরে খাচ্ছে সইদুলের।
বুধবার প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল৷ ১৩৯ দিন পর ফল প্রকাশ হবলেও পরীক্ষার্থীরা এখনই মার্কশিট পাবেন না৷ পরে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ আগামী ২২ ও ২৩ জুলাই মার্কশিট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এবার সাফল্যের নিরিখে প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর৷ এই জেলায় সাফল্যে হার ৯৬.৫৯ শতাংশ৷ একটু উন্নতি করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে কলকাতা৷ সাফল্যের হার ৯১.০৭ শতাংশ৷ এবছর পাসের হার বেড়েছে৷ ৮৬.৩৪ শতাংশ৷ সাফল্যের শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা৷ পাসের হার ৯৬.৫৯ শতাংশ৷ দ্বিতীয় পশ্চিম মেদিনীপুর৷ ৯২.১৬ শতাংশ। তৃতীয় কলকাতায় পাসের হার ৯১.০৭ শতাংশ৷