চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘মিসাইল ম্যান’, পঞ্চম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য

চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘মিসাইল ম্যান’, পঞ্চম প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধার্ঘ্য

সিদ্ধার্থ বোস: ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামে’র আজ পঞ্চম প্রয়াণ দিবস। 'আবদুল কালাম' এই নামটা শুনলেই শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে আসে মাথা। তাঁর জীবন দর্শন, আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছে গোটা দেশের যুব সম্প্রদায়। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই এই মহান ব্যক্তি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর আদর্শ আজও ছড়িয়ে আছে ভারতের প্রতিটি কোনায়।

ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরো'র বিজ্ঞানী তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের জীবন দর্শন পুরোপুরি আলাদা ছিল। তিনি কোনও দিন নিজেকে নিয়ে গর্ব বোধ করেননি। অহংকার শব্দটাকেই তিনি ঘৃণা করতেন। যুব সম্প্রদায়কে তিনি সব সময় এগিয়ে আসার কথা বলতেন। একবার তাঁর বাড়িতে সুরক্ষার জন্য পাঁচিলে কাচের টুকরো লাগানোর কথা হয়। কিন্তু তিনি তা লাগাতে দেননি। তাঁর কথায়, ওই কাঁচের টুকরো লাগালে পাখিরা আসতে পারবে না। তাদের সমস্যা হবে। পাখিরা তাঁর বাড়ির পাঁচিলে এসে বসত, তা দেখতে তিনি পছন্দ করতেন, সেই কাচ লাগালে পাখিদের পায়ে লেগে যেতে পারে এই কথা ভেবেই সেই কাচ তিনি লাগাতে দেননি। এমনই ছিল তাঁর বিচার।

একবার কালামকে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসাবে ডাকা হয়েছিল, যেদিন ডাকা হয়েছিল তিনি তার আগের দিন রাত্রিবেলা সেখানে পৌঁছে যান। ওই অনুষ্ঠানের জন্য যে সমস্ত পড়ুয়ারা নিজের হাতে কাজ করছে তাদের উদ্যোগই তিনি আসলে দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেলে সেটা তো এই পরিশ্রমের ফল, আমার পরিশ্রম যারা করছে তাদের দেখার ইচ্ছা হয়েছিল।' এরকমই অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি।

তাঁর মতে, মানুষ নিজের কাজ দিয়েই নিজের ভাগ্য তৈরি করে নিতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অহংকার ত্যাগ করার কথা তিনি সব সময় বলেছেন। এ প্রসঙ্গে, একদিন তিনি বক্তব্য রাখতে এক অনুষ্ঠানে যান, সেখানে তাঁর জন্যে রাখা চেয়ারে তিনি বসতে চাননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ওই চেয়ার বাকিদের থেকে আকারে বড়। যদি বসতেই হয় তাহলে সবাইকে ওই চেয়ার দিতে হবে, কিংবা বাকিরা যে চেয়ারে বসেছেন, তাঁকেও সেই একই চেয়ার দিতে হবে।

২০১১ একটি সিনেমা তৈরি হয়েছিল, যার নাম 'আই অ্যাম কালাম'। এই ছবি দেখে ‘ভারতের মিসাইল ম্যান’ এতটাই খুশি হয়েছিলেন, তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে এই ছবির রকটি স্ক্রিনিং করান। ভারতের ইতিহাসের পাতায় কালাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তা বলাই বাহুল্য। কালামের আত্মজীবনী ‘উইংস অফ ফায়ার’ তাঁর কাজের মতোই ভারতীয় সাহিত্যে একটা মিসাইল, যা আজও উদ্বুদ্ধ করে চলেছে যুব সমাজকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =