উচ্চশিক্ষার মাঝে নেওয়া যাবে দীর্ঘ বিরতি, লাটে মাধ্যমিক, এম ফিল! নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

উচ্চশিক্ষার মাঝে নেওয়া যাবে দীর্ঘ বিরতি, লাটে মাধ্যমিক, এম ফিল! নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

নয়াদিল্লি:  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে মন্ত্রীসভার বৈঠকে শিক্ষা নীতি নিয়ে বড় সড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল কেন্দ্র৷ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গত ৩৪ বছরে শিক্ষানীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। আশা করি, যে শিক্ষানীতির প্রবর্তন করা হয়েছে দেশবাসী এবং বিশ্বের তাবড় শিক্ষাবিদ এই শিক্ষানীতির প্রশংসা করবেন।’’ এদিন সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখারিয়াল নিশাঙ্কও৷ 

আরও পড়ুন- স্কুলশিক্ষায় আমূল বদল, গুরুত্বহীন মাধ্যমিক! নয়া শিক্ষানীতিতে অনুমোদন কেন্দ্রের

এত দিন আমাদের দেশে ১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল পলিসি অফ এডুকেশন (এনপিই) নীতি মেনে চলা হচ্ছিল৷ ১৯৯২ সালে এই নীতি সংশোধন করা হলেও, বিশেষ কোনও পরিবর্তন করা হয়নি৷ নতুন শিক্ষা নীতি নির্ধারণের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার দুটি সমিটি তৈরি করেন৷ একটি হল টিএসআর সুব্রহ্মণ্যম কমিটি রিপোর্ট (২৭ মে, ২০১৬) এবং ড. কে কৌস্তুরিরঙ্গন কমিটি (৩১ মে, ২০১৯)৷ এছাড়াও নয়া নীতি প্রবর্তনের আগে ব্যাপক ভাবে আলোচনা করা হয়েছে৷ www.MyGov.in –এর মাধম্যে ২.৫ লাখ গ্রামপঞ্চায়েত, ৬৬০০ ব্লক, ৬০০ ইউএলবি, ৬৭৬টি জেলা স্তরে পৌঁছে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে৷ এর পর ‘ড. কৌস্তুরিরঙ্গন ড্রাফট ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি’ তাঁদের খসড়া পেশ করেন৷ এমনকী সাধারণ মানুষের মতামতও জানা হয়েছে৷ তাঁরা শিক্ষানীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন চান, তা জানা হয়েছে৷ এর ভিত্তিতেই এই শিক্ষা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল বদল, কমছে দশমের গুরুত্ব, নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

নয়া শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে  উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ এর জন্য হোলিস্টিক শিক্ষায় নতুন ব্যবস্থা আনা হচ্ছে৷ যেমন বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, চার বছর বা ছ’টা সেমিস্টার পড়ার পর কোনও কারণে পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে না পারলে,  পড়ুয়ারা আউট অফ সিস্টেম হয়া যান৷ কিন্তু নয়া মাল্টিপল এন্ট্রি-এগজিট নিয়মে এক বছর পর সার্টিফিকেট, দুই বছর পর ডিপ্লোমা এবং তিন বা চার বছর পর ডিগ্রি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে৷ ব্যাঙ্কের মতোই শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রথম বা দ্বিতীয় বছরের ক্রেডিট ট্রান্সফার হবে৷ অ্যকাডেমিক ক্রেডিটে ডিজি লকারের মাধ্যমে এই ক্রেডিট করা হবে৷ ফলে দু’বছর পর কোনও কারণে পড়াশোনা বন্ধ করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফের পড়া চালু করতে চাইলে আর প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করতে হবে না৷ ডিজি লকারে যে ক্রেডিট জমা রয়েছে, তার মাধ্যমেই পরবর্তী পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে৷ 

আরও পড়ুন-   বদলে যাচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, ৩৫ বছর পর ফিরছে শিক্ষামন্ত্রক

চার বছর ডিগ্রি করার পর যাঁরা গবেষাণা করতে চান তাঁদের জন্য থাকছে আলাদা ব্যবস্থা৷ আবার যাঁরা চাকরি করতে চান, তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে৷ চার বছরের ডিগ্রি কোর্সে এক বছর এম.এ করার পর এমফিল করার প্রয়োজন হবে না৷ সরাসরি পিএইচডি করা যাবে৷ আরও একটি বিষয়ে বদল আনা হয়েছে৷ উদাহরণ স্বরূপ আগে ফিজিক্স অনার্স করলে তার সঙ্গে জুলজি, বোটানি, অঙ্ক বা রসায়ন ইত্যাদি বিষয় নিতে হতো৷ কিন্তু ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর মতো বিষয় নেওয়া যেত না৷ কিন্তু এবার থেকে মাল্টিপল ডিসিপ্লিনারি এডুকেশনে মাইনর এবং মেজরের ব্যবস্থা থাকবে৷ ফলে মেজর প্রোগ্রাম ছাড়া মাইনর প্রোগ্রামও নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা৷ এই শিক্ষানীতির ফলে প্রথমত, সময় নষ্ট না করেই ড্রপআউট ছাত্ররা ফের পড়াশোনা শুরু করতে পারবে৷ দ্বিতীয়ত, যাঁরা আলাদা আলাদা বিষয়ের প্রতি আগ্রহ রাখে তাঁরা ভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়েও পড়ার সু়োগ পাবেন৷ 

আরও পড়ুন- গুরুত্বহীন মাধ্যমিক, ৪ বছরে অনার্স, কলা-বিজ্ঞান মিশিয়ে নয়া শিক্ষানীতি কেন্দ্রের

দেশে প্রায় ৪৫ হাজার অ্যাফিলিয়েটেড কলেজ রয়েছে৷ কলেজগুলিকে আরও স্বায়ত্বশাসনের কথা বলা হয়েছে নয়া নীতিতে। কলেজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হবে। কলেজগুলিকে এ+, এ, বি এই তিন ভাগে ভাগ করা হবে৷ এ ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের উপর অধিক জোর দেওয়া হবে৷  দেশের উচ্চশিক্ষায় ইউজিসি, এআইসিটি, ন্যাশনাল কনসাল্ট ফর টিচার্স এডুকেশনের মতো একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে৷ এবার থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি মাত্র পর্ষদ থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷  

আরও পড়ুন- স্কুলশিক্ষায় আমূল বদল, গুরুত্বহীন মাধ্যমিক! নয়া শিক্ষানীতিতে অনুমোদন কেন্দ্রের

জাতীয় শিক্ষানীতিতে এর আগে আঞ্চলিক ভাষাগুলি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে তীব্র আপত্তি উঠেছিল। বুধবার মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নয়া এই জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরির আগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সবিস্তার পর্যালোচনা করা হয়েছে। ভাষা নিয়ে জটিলতা কাটাতে তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, তেলঙ্গানা, কর্ণাটক, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলির শিক্ষাসচিবদের সঙ্গে আলোচনায় নানা দিক খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সেগুলিও খুঁটিয়ে পর্যালোচনার পরেই তৈরি হয়েছে শিক্ষা নীতির চূড়ান্ত খসড়া৷  আধিকারিকরা জানান, এবার থেকে আঞ্চলিক ভাষার জন্য ই-কোর্স ডেভলপ করা হবে৷ ইংরেজি, হিন্দি ছাড়াও এই সকল আঞ্চলিক ভাষায় ই-কোর্স থাকবে৷ 

আরও পড়ুন- আরও জটিল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া! পুরোনো রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বহু কলেজ

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এবার এবার থেকে আর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকছে না৷ ১৯৬৮ সালে চালু হওয়া স্কুলশিক্ষার পুরোনো ১০+২ মডেল ভেঙে নতুন নিয়মে  ৫+৩+৩+৪ মডেল কার্যকর হবে বলে নয়া শিক্ষানীতিতে৷  ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া শিশুদের বেসিক লিটারেসি এবং নিউমেরিসির উপর ফোকাস করে একটি জাতীয় মিশন গড়ে তোলা হবে৷  নয়া নিয়মে পড়ুয়াদের বয়স চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ ৩ থেকে ৪ বছর, ৮ থেকে ১১ বছর, ১১ থেকে ১৪ বছর, ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত পড়ুয়াদের শ্রেণি বিন্যাস করা হয়েছে৷ প্রাক প্রাথমিকেও দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ ৩ বছর পর্যন্ত গ্রেড-১, দু’বছরে গ্রেড-২৷ এর পর তিন বছর প্রস্তুতিমূলক স্তরের গ্রেড ধরা হয়েছে ৩,৪,৫ করে৷ পরের তিন বছরে উচ্চ প্রাথমিক স্তরে গ্রেড ধরা হয়েছে ৬,৭ ও ৮৷ সবশেষে চার বছরের মাধ্যমিকস্তর৷ দেওয়া হয়েছে ৯,১০,১১ ও ১২৷ এভাবেই ৫+৩+৩+৪ পদ্ধতি চালু হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =