অনলাইন ক্লাসের বেহাল পরিকাঠামোয় জেরবার ভবিষ্যৎ শিক্ষা, বিপাকে বহু পড়ুয়া

অনলাইন ক্লাসের বেহাল পরিকাঠামোয় জেরবার ভবিষ্যৎ শিক্ষা, বিপাকে বহু পড়ুয়া

নয়াদিল্লি: করোনার জেরে বন্ধ স্কুল কলেজ, সেই মার্চ থেকে। কিন্তু পড়াশোনা তো আর থেমে থাকতে পারে না, শুরু অনলাইন ক্লাস৷ অনলাইন পড়াশোনার ওপর জোর দিতে চাইছে দেশের প্রতিটা শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু অনলাইন প্রযুক্তিতে পড়াশোনা করানোর জন্য যেমন শিক্ষক শিক্ষিকারা অসুবিধায় পরেছেন, তেমনই অনেক পড়ুয়াদের এই অনলাইন পড়াশোনা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মেধাবী অথচ সামর্থ্য না থাকায় পড়াশোনার স্বপ্ন আটকে যাচ্ছে।

দিল্লির সুমিতের পরিবারের স্মার্টফোন কেনার সামর্থ্য নেই। মুম্বই এ আর্য কলোনির জ্যোতি রাধে, শ্রীনগরের শেখ মুস্তাকের সমস্যা ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে। আর তার সঙ্গে লোডশেডিং। এরকম নানা সমস্যা পড়ুয়াদের পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এই সমস্ত শব্দগুলি ওদের কাছে পরিচিত। কিন্তু বাড়িতে সেগুলি ব্যবহার করার মতো ব্যবস্থা বা সামর্থ্য তাদের নেই।

দেশ জুড়ে নানা প্রান্তের এই একই সমস্যা ভারতের আধুনিক পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারাটা টেনে বার করে আনছে প্রতি নিয়ত। ইন্টারনেটের স্পিড কম থাকায় বড় বড় ফাইল ডাউনলোড হচ্ছে না। কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহারের ফলে চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু লোডশেডিং হওয়ায় চার্জ দেওয়ারও সমস্যায় পরছে পড়ুয়ারা। এদিকে এই সমস্ত গরীব পরিবারে একটা বেশি স্মার্টফোন রাখার সামর্থ্য না থাকায়, কাজের জন্য মোবাইল হাতছাড়া করতে চাইছেন না পড়ুয়াদের মা-বাবা। এরকম নানা সমস্যা ঘিরে ধরছে পড়ুয়াদের এক বিরাট অংশকে।

কলকাতার এক ভূগোল শিক্ষিকার কথা, ছাত্রছাত্রীদের মানচিত্র দেখিয়ে পড়াতে হয়। কিন্তু ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটারে তা সম্ভব নয়। ফলে পড়াশোনা করাতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আরেকজন হিন্দি ও ইতিহাসের শিক্ষিকা জয়েশ্বর সুলোচনা’র কথায়, বেশিরভাগ গরীব পরিবারের পড়ুয়াদের একটাই ঘর, ফলে ভিডিও কনফারেন্সের সময় আশপাশ থেকে কথা বা টিভি চলার শব্দ পড়ানোয় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। আবারর অনেকে ঠিকমত মোবাইল ব্যবহার করতে না জানায়, বারবার ভিডিও থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাকে পুনরায় কনফারেন্সে যোগ করতে সময় বেরিয়ে যাচ্ছে।

সরকারের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ২০১৭-১৮ সালে দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ দৈনিক ১-৮ ঘণ্টা ইলেক্ট্রিসিটি পেয়েছেন, ১২ ঘণ্টা আলো থাকে ৪৭ শতাংশের বাড়িতে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী দেশের মোট জনগণের ৩৪ শতাংশ পুরুষ এবং ১৫ শতাংশ মহিলা স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। ফলে শুধুমাত্র পড়ুয়াই যে সমস্যায় পরছে তা নয়,  অনলাইনে আদতে পড়াশোনা করাতে পারছেন না শিক্ষকেরাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 17 =