নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে সময়ের আগে ছুটছে কেন্দ্র সরকার: যাদবপুর উপাচার্য

নয়া নীতিতে প্রতি কলেজে ৫ হাজার পড়ুয়া থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলিতে এত পড়ুয়া আসবে কোথা থেকে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

নয়াদিল্লি ও কলকাতা: আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পেশ করা নয়া শিক্ষানীতি নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, এই নীতিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার অস্তিত্ব বিপন্ন করা হচ্ছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্নাতক স্তরের পড়াশোনা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ের দিকে আঙুল দেখাচ্ছে বিরোধীরা, তা হল পরিকাঠামো।

আরও পড়ুন: নয়া শিক্ষানীতি চাকরি নয়, চাকরিদাতা তৈরি করবে: নমো

 

ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চার বছর সময় লাগে, অন্যদিকে স্নাতক স্তরে বাণিজ্য, কলা এবং বিজ্ঞান বিভাগে সময় লাগে তিন বছর। ফলে পড়ুয়াদের শৈশব থেকে স্নাতক অতিক্রম করতে ১৫ বছর সময় লাগে। সেখানে বিদেশে এই সময় ১৬ বছরের। নয়া শিক্ষা নীতি অনুযায়ী এবার থেকে ১৬ বছরই সময় লাগবে, যার ফলে পড়ুয়াদের বিদেশে গিয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনায় আর বাধা থাকবে না। এই নীতিতে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু স্নাতকের চার বছরের প্রত্যেক বর্ষে সার্টিফিকেট, ডিগ্রি, মূল্যায়ন পত্র দেওয়া হবে তাই, পড়ুয়া দু’ বছর পড়ে কলেজ ছেড়ে দিলেও তার ওই দুটো বছর নষ্ট হবে না। 

 

কিন্তু বিরোধীরা প্রশ্ন করছেন, স্নাতক স্তরে এই নীতি কার্যকর করতে গেলে শিক্ষক শিক্ষিকা সমেত সামগ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোকে যে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তা সম্ভব হবে কি না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, এই নীতি কার্যকর হতে এখনও অনেক দেরি আছে। তাঁর কথায়, ‘স্নাতক স্তরকে তিন থেকে চার শিক্ষা বর্ষে পরিণত করতে যে পরিকাঠামোর দরকার পড়বে তা এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়।’ সরকার সময়ের একটু বেশি আগে আগে ছুটছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন: চাল-আলুর সঙ্গে সাবান-বিস্কুট দেওয়ায় শিক্ষককে শোকজ! প্রত্যাহারের দাবি শিক্ষক সংগঠনের 

 

অন্যদিকে, নয়া শিক্ষানীতিতে তিন প্রকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে, যেখানে দুটি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকে পড়াশোনার মধ্যে গ্রহণ করা হলেও সর্বনিম্ন মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সুযোগ থাকবে না। বিরোধীরা জানিয়েছে, এরকম বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই, যেখানে গবেষণা করা যাবে না। এছাড়াও তাদের মতে, এই নীতিতে বেসরকারি লগ্নিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। নয়া নীতিতে প্রতি কলেজে ৫ হাজার পড়ুয়া থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলিতে এত পড়ুয়া আসবে কোথা থেকে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিতত্ত্ব বিষয়ের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি পার্থিব বসু বলেছেন, এই নীতিতে গবেষণা তথা সমগ্র পড়াশোনাকে সংকোচন করা হচ্ছে। তাঁর মতে, প্রান্তিক অঞ্চলের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে এই নীতিতে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এই নীতি সংশোধনের ১০-১২টা পয়েন্ট দেখে রেখেছেন, যথাসময়ে সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 5 =