কলকাতা: গ্রেফতারি এড়াতে ঘন ঘন গাড়ি পালটাতেন শ্রীকান্ত মোহতা । গ্রেফতারের দিন কুড়ি আগে থেকেই মোহতাকে পাকড়াও করার পরিকল্পনা করছিল সিবিআই । সকালের মর্নিং ওয়াক থেকে কসবার অফিসে যাওয়া বা রাতে তাঁর বাড়ি ফেরা, সবই নজরে থাকত তদন্তকারীদের । ভেঙ্কটেশ কর্ণধারের গতিবিধিও নজরে রাখতে শুরু করে সিবিআই ।
সিবিআইয়ের দাবি, ঘটনা টের পেতেই পাল্টা মতলব আঁটেন ভেঙ্কটেশ কর্ণধার পাল্টে ফেলেন কৌশল । কোনও জায়গায় গেলে এক গাড়ীতে যেতেন না তিনি । রাস্তাতেই গাড়ি বদল করতেন শ্রীকান্ত মোহতা । শুধু তাই নয়, গাড়িতে নম্বর প্লেটও পাল্টে ফেলা হত । সূত্রের খবর, ওড়িশার নম্বর প্লেট ব্যবহার করেও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি । কোথায় যাচ্ছেন, কে আছেন সঙ্গে, কার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, তা যাতে বোঝা না যায়, সে কারণেই এসব কৌশল নেওয়া হয়েছিল বলে অনুমান সিবিআইয়ের ।
রোজভ্যালি কাণ্ডে ধৃত শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ভুবনেশ্বরের আদালত । গত ২৪ জানুয়ারি কসবায় শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের অফিস থেকেই শ্রীকান্ত মোহতাকে সিজিও কমপ্লেক্সে তুলে নিয়ে যায় সিবিআই । পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । রাতভর জেরার পর শুক্রবার দুপুরে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধারকে নিয়ে ভুবনেশ্বর উড়ে যান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী অফিসাররা । ভুবনেশ্বর আদালতে শুনানির সময় ধৃত শ্রীকান্ত মোহতাকে নিজেদের হেফাজতে চায়নি সিবিআই । বদলে জেল হেফাজতের আবেদন জানানো হয় সিবিআইয়ের তরফে । সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেন, স্বাস্থ্যের কারণেই ধৃত শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধারকে সিবিআই হেফাজত চাওয়া হয়নি ।
আদালতে তাঁর মক্কেলের জামিনের জন্য আবেদন করেন শ্রীকান্ত মোহতার আইনজীবী । তিনি দাবি করেন, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সব লেনদেন স্বচ্ছ । কোনও তথ্য প্রমাণ নেই সিবিআইয়ের হাতে । আদালতে কোনও তথ্য প্রমাণই পেশ করতে পারেনি সিবিআই । যা খারিজ করে দিয়ে পাল্টা যুক্তি দেয় সিবিআই । কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে আদালতে পাল্টা দাবি করা হয়, শ্রীকান্ত মোহতার কেস ডায়রিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে । মামলার সেইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্য আদালতে বলা সম্ভব নয় । ডায়রি খতিয়ে দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে দাবি করেন সিবিআই আইনজীবী । ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধারকে শারীরিক অবস্থার জন্য সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নেয়নি বটে, তবে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দস্তুর মতো । শ্রীকান্ত মোহতার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকার প্রতারণা অভিযোগ উঠেছে ।
এছাড়াও, সারদা সহ অন্যান্য চিটফান্ড কোম্পানিরও ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তিনি সদর্থক ভূমিকা নেন বলে অভিযোগ । তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, চিটফান্ড ব্যানিং অ্যাক্ট সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে । বেশ কয়েকটি বিষয়ে জেরা করা হয়েছে মোহতাকে । রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে ২৫ কোটি টাকার চুক্তির কোনও যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে কি না জানতে চান গোয়েন্দা কর্তারা । দ্বিতীয়ত যদি টাকা নিয়েই থাকেন শ্রীকান্ত, তাহলে যে সিনেমা প্রযোজনার জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে, সে সিনেমা কোথায় গেল !
গৌতম কুণ্ডু জানিয়েছিলেন প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই এই টাকা, সে ক্ষেত্রে কে বা কারা এই প্রভাবশালী ! বারবার ডাকা সত্ত্বেও কেন সিবিআই অফিসে আসেননি শ্রীকান্ত মোহতা, তদন্তকারী আধিকারিকরা সে কথাও জানতে চান । শুধু গৌতম কুণ্ডু নন, জানা গিয়েছে সারদার সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকেও একটি অনুষ্ঠানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার জন্য টাকা নিয়েছিলেন শ্রীকান্ত ।
তদন্তকারী অফিসারদের প্রশ্ন, কোন অনুষ্ঠানের জন্য কত টাকা নিয়েছিলেন তিনি । এই যে টাকা নেওয়া হয়েছিল, তা কার নির্দেশে নেওয়া হয়েছিল, সে টাকা গেল কোথায়, এবং কোন প্রভাবশালীর নির্দেশে ভেঙ্কটেশ কর্ণধার এ কাজ করেছেন, তদন্তকারীরা তাও জানতে চাইছেন শ্রীকান্ত মেহেতার কাছে । এর আগেও পোর্টের জমিকে কেন্দ্র করে এবং লেক মলের ইস্যুতে এই প্রযোজকের নাম উঠেছিল ।