নয়াদিল্লি: প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০র অধীনে চার বছরের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি স্নাতক এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০ টি এমিন্যান্স ইনস্টিটিউট (আইএস), কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম শুরু হবে । সোমবার ফিকি'র একটি অনলাইন সেমিনারে যোগ দিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় উচ্চ শিক্ষা সচিব অনিত খারে।
একইসঙ্গে নতুন শিক্ষানীতির একাধিক কার্যক্রম, পরিকল্পনা ও এর আরও নানান বৈশিষ্ট্যগুলি তুলেধরেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালগুলির জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) ২০২০ এর আওতায় প্রস্তাবিত হিসাবে একটি সাধারণ প্রবেশিকা পরীক্ষাও শুরু করা হবে। তবে এই পরীক্ষার নম্বর মান্যতা পাবে কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেরাই স্থির করবে।
শিক্ষার্থীদের একাধিক প্রবেশ ও প্রস্থান বিকল্পের সুযোগ থাকবে চার বছরের এই মাল্টি ডিসিপ্লিনারি স্নাতক এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ক্ষেত্রে। এই কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ক্রেডিট জমা রাখার জন্য একটি একাডেমিক ব্যাংক গঠনের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক।
একাডেমিক ব্যাংকের জন্য একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরির কাজ নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে আধার কার্ড হিসেবে একটি পোক্ত ভিত এবং ডিজি-লকারের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকটি আইআইটির সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত একাডেমিক ক্রেডিট ব্যাংকের পরীক্ষা চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই নেওয়া হবে যাতে চার বছরের স্নাতক এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু করা যায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাধিক প্রবেশ ও প্রস্থান বিকল্পের সুবিধার্থে এনইপি শিক্ষার্থীদের অর্জিত একাডেমিক ক্রেডিটকে ডিজিটালি সংরক্ষণের জন্য অ্যাকাডেমিক 'ব্যাংক অফ ক্রেডিট' স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে যাতে এগুলি স্থানান্তরিত এবং চূড়ান্ত ডিগ্রির জন্য পরিগণিত হয়।খারে বলেন ইচ্ছুক এবং পরিচালনার ক্ষমতা আছে এমন সরকারি বা বেসরকারি যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই এই দুটি কার্যক্রম চালূকরতে পারে। নতুন শিক্ষানীতিতে সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা হবেনা।
বর্তমান নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে প্রস্তাবিত এনইপি প্রসঙ্গে উচ্চশিক্ষা সচিব বলেন যে, এই নীতি বাস্তবায়নে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মূল বিভাগ নিয়ে ভারতের উচ্চশিক্ষা কমিশন (এইচইসিআই) স্থাপনের জন্য একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। এই চারটি স্বতন্ত্র মূল বিভাগ হল, পৃথক নিয়ন্ত্রণ, স্বীকৃতি, তহবিল এবং শিক্ষাগত মান নির্ধারণ। তবে এই বিলটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আগে মন্তব্য এবং পরামর্শের জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই বিলটি সর্বসমক্ষে পেশ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন খারে।
কলেজগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এনইপি-র প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে খারে বলেন, এর জন্য যে বিধিগুলি কার্যকর করা হচ্ছে তা সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে ভেদাভেদ রাখবেনা এবং জাতীয় মূল্যায়ন দ্বারা এ + হিসাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা দেওয়া হবে । এরফলে একটি কলেজে নিজেরাই ডিগ্রি প্রদান এবং তাদের নিজস্ব কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা পাবে। পাশাপাশি যে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলি এবং এছাড়াও ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ‘এ’ গ্রেড প্রাপ্তরা কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা শিক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই যাতে নতুন বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে তার জন্যেও একটি নতুন নিয়ম আনার কাজ চলছে । প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনার ধরণের মধ্যেও কোনও পার্থক্য করা হবে না, ফলে এই একই মর্যাপ্রাপ্ত বেসরকারী কলেজগুলিও পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন ছাড়াই নতুন বহুমাত্রিক কর্মসূচি শুরু করতে পারবে।
নতুন শিক্ষা নীতির একটি সম্পূর্ণ সেট ইস্যু করা হবে। নীতিগুলি বাস্তবায়নে উপাচার্যদের পরামর্শ এবং সহায়তার জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরির কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।সর্বোপরি, এনইপি বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি সুস্পষ্ট 'রোডম্যাপ' চলতি মাসের শেষের দিকেই প্রস্তুত হয়ে যাবে বলেই আশা প্রকাশ করেছেন উচ্চশিক্ষা সচিব।