চিটফান্ড মামলায় তৃণমূল সাংসদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি

নয়াদিল্লি: চিটফান্ড-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি৷ সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্র খবর, অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে প্রতারণা করেছেন এই তৃণমূল সাংসদ৷ সেই সংক্রান্ত মামলাও চলছে৷ এবার, কে়ডির ২৬০০ কোটির টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি দুই ব্যাংক অ্যাকাউন্টও সিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি৷ অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে

চিটফান্ড মামলায় তৃণমূল সাংসদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি

নয়াদিল্লি: চিটফান্ড-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংহের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি৷ সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্র খবর, অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে প্রতারণা করেছেন এই তৃণমূল সাংসদ৷ সেই সংক্রান্ত মামলাও চলছে৷ এবার, কে়ডির ২৬০০ কোটির টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি দুই ব্যাংক অ্যাকাউন্টও সিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি৷ অ্যালকেমিস্ট সংস্থার মাধ্যমে মাধ্যমে বাজার থেকে ১৯০০ কোটি টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে৷

যদিও গত বছর ৮ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কেডি সিংহের অ্যালকেমিস্ট সংস্থা তার কোনও স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দেশের বাইরে বিক্রি করতে বা পাঠাতে পারবে না৷ এমনকী, বিদেশের কোনও সংস্থার সঙ্গেও ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারবে না হাইকোর্টের নির্দেশ ছাড়া৷ আদালতে বিধিনিষেধের পর এবার ইডির কবলে তৃণমূল সাংসদের প্রতারণার টাকা!

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি চিটফান্ড-কাণ্ডে প্রতারণার অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ৷ চিটফান্ড প্রতারণার তদন্তকারী সিটইও গঠন হয়েছে৷ নারদ স্ট্রিং অপারেশনের জন্য কেডি সিংয়ের সংস্থা অ্যালকেমিস্ট ৮০ লক্ষ টাকা দেয় বলে দাবি করেন ম্যাথু স্যামুয়েল৷

কেডি সিং৷ পুরো নাম কুনওয়ার দীপ সিং৷ ১৯৬১ সালের ২১ আগস্ট পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহিবে জন্ম৷ ১৯ বছর বয়স থেকে ব্যাবসাপাতি (ট্রেডিং) শুরু করলেও পরিচিতি বাড়ে ১৯৮৮ সাল থেকে৷ ওই বছরই তিনি চণ্ডিগড়ে টারবো সংস্থার নামে ব্যবসা ফাঁদেন৷ ২০০৪ সালে এই সংস্থারই নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় অ্যালকেমিস্ট৷সেবি-র হিসাবে, মাত্র ১৮ মাসে অ্যালকেমিস্ট প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের কাছ থেকে কম করে ১০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে। সারদার মতোই মূলত বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা এবং অসমের মানুষের মাথায় টুপি দিয়ে অ্যালকেমিস্ট টাকা তুলেছিল।

অ্যালকেমিস্টের কারবার চালানোর পাশাপাশি রাজনীতিতেও প্রবেশ করেন কেডি সিং৷ প্রথমে ২০১০ সালে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সমর্থনে রাজ্যসভার সদস্য হন। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৪ সালে ফের তিনি তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার আসনটা ধরে রাখেন৷ একদা তিনি মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন৷ ২০১১ সালের আগেই ঝাড়খণ্ডী সাংসদ হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে সহায়তা করেছিলেন৷ যদিও ২০০৪ সাল থেকেই এ রাজ্যে অ্যালকেমিস্টের ফলাও কারবার৷ তখন এখানে সিপিএমের পরিচালনায় বাম রাজত্ব৷ দুর্গাপুরে একটি পোলট্রি ও হ্যাচারি ফার্ম গড়ার মাধ্যমে বর্ধমান জেলায় তখন যাঁরা হর্তাকর্তা সেই সিপিএম নেতাদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়েন কেডি সিং৷

রাজনীতির আঙিনায় ঢোকার পর থেকেই অবশ্য নানা সময় বিতর্ক তাড়া করেছে কেডি সিং-কে৷ তিনি যখন রাজ্যসভায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী তখনই স্টিং অপারেশনে দেখা যায়, তাঁকে ভোট দেওয়ার জন্য ছয় বিধায়ককে টাকা নিতে৷ ঘুষের অংকটা ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা৷ ২০০৯ সালে আয়কর দফতর অ্যালকেমিস্টের ১১টি দপ্তরে একযোগে হানা দিয়ে নগদ ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে, যার সবটাই হিসাব-বহির্ভূত। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে দিল্লিতে আন্তঃরাজ্য বিমানবন্দরে বহু টাকা সমেত ধরা পড়েন কেডি সিং৷ যুক্তি হিসাবে তখন তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের প্রয়োজনেই টাকাটা তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন গুয়াহাটিতে। এই ঘটনার পর দিল্লিতে নির্বাচন কমিশন তৃণমূল কংগ্রেসকে চিঠিও দিয়েছিল। এই ঘটনার বছর তিনেক আগে, ২০১১ সালে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে, কেডি সিং হঠাৎ টাকা ঢেলে এবং তথ্য-হিসাবে কারচুপি করে অ্যালকেমিস্টের অধীনস্থ কয়েকটি সংস্থার শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে নিয়েছেন৷

২০১২ সালে গোটা দেশে চিটফান্ডগুলির বিপদ ঘনিয়ে আসে। আমানতকারীরা বিভিন্ন সংস্থায় তাঁদের জমানো টাকা একযোগে ফেরত পাওয়ার দাবি তোলা শুরু করতেই বিপদে পড়ে যায় ঠগ-জোচ্চোর সংস্থাগুলি। কেন্দ্রীয় সরকারের কোম্পানি বিষয়ক দফতরও সরাসরি অ্যালকেমিস্টকে জানিয়ে দেয় যে, বাজার থেকে আর টাকা তোলা যাবে না৷ ২০১৫ সালের আগস্টে সেবি ১৫ শতাংশ হারে সুদ সহ আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি৷ বাংলার রাজনীতির আঙিনায় ঢোকার পর ২০১২ সালে অ্যালকেমিস্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ছেলে করণদীপ সিংকে চেয়ারম্যান করে দেন কেডি সিং। নিজেকে রাখেন অ্যালকেমিস্টের একটি অবৈতনিক পদে। অনন্ত মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের অধিকাংশ শেয়ারও কিনে ফেলেন। এর ফলে নিউজ পোর্টাল তহেলকা ডট কমের মালিকানা আসে কেডি সিংয়ের হাতে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =