নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক অনলাইন পঠনপাঠন নিয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করলেও, দেশের অনলাইন ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত পড়ুয়াদের অসাম্য ধরা পড়েছে কেন্দ্রীয় সমীক্ষায়। অনলাইন পড়াশোনায় বিপাকে পড়েছে দেশের ৫০ শতাংশ পড়ুয়া। এর মধ্যে ২৭ শতাংশের কাছে না আছে স্মার্টফোন না আছে কম্পিউটার। বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যহত হওয়ায় বিপাকে ২৮ শতাংশ পড়ুয়া।
কেন্দ্রীয় এই সমীক্ষার প্রধান আয়োজক ছিল মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের অধীন স্কুল বোর্ড সিবিএসই। পাশাপাশি এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল জাতীয় স্তরের সিলেবাস কমিটি বোর্ড এনসিইআরটি'ও। পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সঙ্গেও সমীক্ষায় কথা বলা হয়েছে। সিবিএসই বোর্ডের একাধিক স্কুলের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও নবোদয় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিকেও সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছিল। সমীক্ষার রিপোর্ট ইতিমধ্যেই মন্ত্রকের কাছে জমা করা হয়েছে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অনলাইন পড়াশোনায় যেসমস্ত পড়ুয়াদের স্মার্টফোন আছে তাদেরও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে দুর্বল নেটওয়ার্কের জন্য। অনলাইন পাঠে মোবাইল ফোনই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে ল্যাপটপ ব্যবহার হলেও সংখ্যাটা খুবই কম। খারাপ নেটওয়ার্ক পরিষেবায় পঠন পাঠনের সামগ্রি ডাউনলোড করতে সমস্যায় পড়ছে পড়ুয়ারা। সরকারিস্তরে রেডিও বা টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা বাস্তবে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
সমীক্ষায় সমস্যার কথা বলেছে ৫০ শতাংশের বেশি পড়ুয়ারা। স্কুলে ক্লাসরুমে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সামনে যেভাবে পড়াশোনা করা যায় তা অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে মলাট বাঁধা বই থেকে পড়াশোনায় অভ্যস্ত পড়ুয়াদের মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে ধরতে অসুবিধায় পড়ছে। ডিভাইস না থাকা ১০ থেকে ২০ শতাংশ পড়ুয়ারা চরম অসুবিধায় পড়েছে। পাশাপাশি বাড়িতে পড়াশোনা করার পরিবেশ না থাকায় সমস্যায় পড়েছে একাধিক পড়ুয়া, এমনটাই জানা গেছে সমীক্ষার রিপোর্টে।
গৃহবন্দি পড়ুয়ারা এখনও জানেনা স্কুল কবে খুলবে। সিবিএসই বোর্ডের বেশিরভাগ স্কুল বেসরকারি মালিকানাধীন হলেও, উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে অনলাইন পাঠ নিয়ে চরম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ। তাদের অনেকেরই দাবি, ক্লাসরুমের বাইরে অনলাইন পাঠদানের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা প্রয়োজন। কিন্তু সেই ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায়, কীভাবে পাঠদানের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা যায় তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ওপরেই।
রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, অনলাইন পাঠের মূল 'ডেটা' সাধারণ পরিবারের কাছে যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ। পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রেও অনলাইন পাঠে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে অঙ্কের মতো বিষয়ে, যেখানে প্রশ্ন উত্তরের নির্ভর করেই পড়ানো হয়, সেখানে অনলাইনে তা করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্র্যাকটিকাল কাজ করা যাচ্ছে না। সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ক্লাসরুমের মতো বিনিময় সুযোগ অনলাইন মাধ্যমে প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে অনলাইন পাঠে সামগ্রিক ভাবে অসাম্যের চিত্রটি স্পষ্ট এই সমীক্ষায়।