কলকাতা: তিন বছর পর ফের বড়সড় ব্রিগেড সমাবেশ করছে রাজ্য বামফ্রন্ট৷ সমাবেশ মঞ্চ থেকে এদিন তৃণমূল-বিজেপিকে আক্রমণ করেন বাম নেতারা৷ এদিন ব্রিগেড সমাবেশে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য৷ বলেন, ‘‘আজ আমর সরকারে নেই৷ তবুও, আজ ব্রিগেড প্রমাণ করে দিল, বামেরা জানতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে৷’’ এদিন ব্রিগেডে আসা কর্মসমর্থকদের অভিভাদন জানান তিনি৷ এদিন শুরুতেই বাজেট, এনআরসি, কর্মসংস্থান, জিএসটি নিয়ে মুখ খোলেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কোথায় চাকরি মোদীবাবু? কোথায় শিক্ষা? আজ আপনাকে উত্তর দিতে হবে৷ পাঁচ বছর পর এসে বলছেন শ্রমিকদের পেশন দেবেন তিন হাজার টাকা৷ কিন্তু, আজ থেকে ২০ বছর পর তিন হাজার টাকার মূল্য কী থাকবে? এটা প্রতারণা ছাড়া আর কী৷’’ এদিন রাজ্য তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন৷ বলেন, ‘‘ভাঙড়ে কেন কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না৷ কী অবস্থা সিঙ্গুরের কৃষকদের? এটাই কী বাংলার কৃষি উন্নয়ন৷’’ কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ‘‘দিদি যুবক-যুবতীদের বলেছিলেন, কর্মসংস্থানের দেবেন৷ কিন্তু, আজ দিদি পিসিমনিতে পরিণত হয়ে গিয়েছেন৷’’
এদিন মঞ্চে উঠে হাসির খোরাক হলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি৷ আধা বাংলা, আধা হিন্দিতে ভাষণ দিতে গিয়ে সভার তাল খোয়ালেন ইয়েচুরি৷ এদিন মঞ্চে উঠে দলীয় নেতা কর্মীদের চৌকিদারের গল্প শুনিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন৷ বলেন, ‘‘চৌকিদারের ছুটি হয়ে যাবে৷ কারণ দেশ নেতা নয়, নীতি চাই৷’’ বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ দিল্লি থেকে মোদীকে আর বাংলা থেকে মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে৷ বাধা এলে প্রতিরোধের আগুন জ্বলবে৷’’
এদিন ব্রিগেডে আরএসপির সাধারণ সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেন, ‘‘নোট বাতিলে ৮৬ শতাংশ মানুষের ক্ষতি হয়েছে৷ নোটবন্দির নামে দেশকে লুট করা হয়েছে৷ কর্মসংস্থানের কথা বলে বেকারত্ব বাড়িয়েছে৷ সাধারণ মানুষকে ধোঁকাবাজির করা হয়েছে৷ এখন বিজেপি ধর্মের নামে রাজনীতি করছে৷ আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টাকার দিকেও হাত বাড়িয়েছে মোদি সরকার৷ দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি নষ্ট করা হয়েছে৷ সংস্থাগুলির মাথা বসে গিয়েছে৷ একদিকে দেশে বিজেপির গণতন্ত্র লুটের রাজনীতি করছে, অন্যদিকে নিন্দার রাজনীতি করছে তৃণমূল৷ আসুন তাই আমরা নতুন সরকার গড়ে তুলি৷’’
এদিন ব্রিগেডে বক্তব্য রাখেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি৷ বলেন, ‘‘অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত৷ গণতন্ত্র বিপন্ন৷ গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে৷ ৫ বছরে বিজেপি কিছুই করতে পারেনি৷ তাই সরকারের পতন চাই৷’’ এদিন হুগলি জেলা সিপিএমের নতুন সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘মোদি গান্ধীজি চশমা চুরি করে স্বচ্ছ্ব ভারত করা হয়েছে৷ যে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতি গান্ধীজিকে হত্যা করেছিল, সেই রাজনীতি এরা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলনে বিজেপির কোনও অবদান নেই৷ আর এদের মুখেই বড় কথা৷ রাজ্যের এই পরিবেশে শিল্প আসবে না৷ তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই৷ গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে৷ কৃষকদের আয় কমছে৷ শুধু শিল্পপতিরা লাভবান হচ্ছে৷ তাই এই সরকারের আর আমাদের দরকার নেই৷’’
জনতার ব্রিগেড’ সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু৷ রবিবার সমাবেশ মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘আজ দেশ-রাজ্যে গণতন্ত্র লুট করা হয়েছে৷ বিজেপি-তৃণমূল একই ভাবে দেশে-রাজ্য অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেছে৷ কারণ, বিজেপি-তৃণমূল একই বৃন্তে দুটি ফুল৷ আজ, রাজ্য আরএসএস বেড়ে ওঠার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাত সব থেকে বেশি৷ তাই আমরা বলছি এই দুই সরকারের বিনাশ৷’’
এদিন সভার প্রথম বক্তা হিসাবে বলতে গিয়ে মেজাজ হারান বিমান৷ মঞ্চে বাম নেতাদের কথা বলতে নিষেধ করে বলেন, ‘‘দেখছেন না, কত মানুষ এসেছেন! এত কী কথা৷ এই সব এখানে চলবে না৷’’ সভা শেষে কর্মীদের বলেন, ‘‘আপনারা কেউ মুখে কিছু বলবেন না৷ স্বেচ্ছাসেবকদের ডেকে নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটিয়ে ফেলুন৷’’