কলকাতা: করোনা আবহে নিয়ম বিধি মেনে চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা৷ অনলাইনে ক্লাস করার পর অফলাইন পরীক্ষায় বসে বেশ সন্তুষ্টই ছিল পরীক্ষার্থীরা৷ বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল— তিনটি পরীক্ষাতেই সহজ প্রশ্ন পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল তারা৷ কিন্তু, ‘ফিল গুড’ আমেজ ভাঙল শুক্রবার৷ ইতিহাসের কঠিন প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে কালঘাম ছুটল পরীক্ষার্থীদের৷ নিম্নমেধা থেকে মেধাবী, সকলেই হোঁচট খেল উত্তর লিখতে গিয়ে৷ শিক্ষকদের মতে, এই প্রশ্নপত্র অতি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে পড়ুয়ারা ঠিকমতো ক্লাসই করতে পারেনি, সেখানে এত কঠিন প্রশ্ন না করলেই ভাল হত৷
আরও পড়ুন- বদলে গেল উচ্চমাধ্যমিকের সূচি, ঘোষণা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের
পরীক্ষা শেষে ছাত্রছাত্রীদের রীতিমতো হতাশ। ইংরেজির এক শিক্ষক বলেন, ইনভিজিলেশনের সময় ইতিহাসের প্রশ্নপত্রটি একঝলক দেখেছিলাম। তাতে দেখলাম ফেলিক্স কেরিকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে৷ পরীক্ষার পরে আমার বেশ কিছু সহকর্মীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম৷ তাঁরাও বলতে পারলেন না। ছাত্রছাত্রীরা না জানলে আর অন্যায় কোথায়? পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম উনি উইলিয়াম কেরির ছেলে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র তৈরির সময় মধ্য এবং নিম্নমেধার কথা চিন্তাই করা হয়নি। ইতিহাসে এমন কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে, যার নির্দিষ্ট কোনও উত্তর হয় না৷ সেই সব প্রশ্নের জটিল ব্যাখ্যা দিতে হয়। কিছুক্ষেত্রে আবার অধিক পরিমাণে জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আলাদা করে প্রস্তুতি না থাকলে এসব উত্তর লেখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। এর জন্য ইতিহাসের উপর দখল থাকা দরকার৷ গতানুগতিকভাবে পড়ে আসা ছাত্রদের চার নম্বরের প্রশ্ন ছেড়ে দিতে হয়েছে৷ দু’নম্বরের বেশ কয়েকটি প্রশ্নও ভিন্ন রকমের ছিল৷ দুই বছর ঘরে থেকে অনলাইন ক্লাস করার পর জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় এরকম প্রশ্নের মুখে ফেলা ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, প্রশ্ন পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা কাঁদছিল। এটা কি পরীক্ষায় বসতে চাওয়ার শাস্তি?
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্রর বক্তব্য, এক নম্বরের বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নও বেশ কঠিন হয়েছে। এহেন প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফে কিঙ্কর অধিকারী বলেন, করোনা উত্তর প্রথম মাধ্যমিকের জন্য ইতিহাসের এই প্রশ্ন একেবারেই আদর্শ নয়। প্রশ্নপত্রের ধরন দেখে মনে হয়েছে, পর্ষদ অনুমোদিত টিবি নম্বর দেওয়া টেক্সট বই-এর কোনও মূল্য নেই। টিবি নম্বরহীন বহুমূল্যের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নোত্তরের সহায়ক বইগুলিই আসল৷ মাধ্যমিকের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নগুলি দেখলে দেখা যাবে টেক্সট বই-এর পরিবর্তে সহায়িকা বই-এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন তৈরি করা হয়। তাহলে টেক্সট বইয়ের কোন মূল্য আদৌ রয়েছে কি?
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>