কলকাতা: মা বাবা বড় সাধ করে নাম রেখেছিলেন ‘আশা লতা’। আশালতার স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ সে সদ্য পার করেছে। গ্রামের একমাত্র ও প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের বড়খাঁকড়ি এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই আদিবাসী ও মাহাতো সম্প্রদায়ের। তাঁদের জীবিকা দিনমজুরি কিংবা জঙ্গল থেকে পাতা এনে থালা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা। নয়াগ্রামের ৬০ ভাগ জঙ্গল ৪০ ভাগ জনবসতি। শাল, মহুল, সেগুনে ঘেরা জঙ্গলই ওই এলাকার একমাত্র বেঁচে থাকার সম্বল। এই গ্রামেই আশালতার বাড়ি। মাধ্যমিক ছাত্রী আশালতা সিং৷
প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি পরিবার নিয়ে এই গ্রাম। যাদের একমাত্র জীবিকা জঙ্গল থেকে শালপাতা এনে তা দিয়ে থালা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা। সরকারি সাহায্য বলতে মেলে রেশনের চাল ও আটা। এলাকার বাসিন্দারা জীবন ধারণের জন্য পুরোপুরি জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। শালপাতা থেকে থালা আর শুকনো কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। জঙ্গলের বুনো হাতি বা অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের ভয় স্বত্বেও বেঁচে থাকতে রোজ প্রানের ঝুঁকি নিতে হয় আশালতাদের। গ্রামের মানুষের বক্তব্য, জঙ্গলের পাতা দিয়ে থালা কিংবা দিন মজুরি করে কোনও রকমে সংসার চলে যায়। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করতে স্কুলে পাঠানোকে বিলাসিতা মনে করেন। স্কুলে পাঠালে বাড়তি খরচ চাপবে, কমবে পরিবারের আয়। তাই ওই এলাকায় মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোয়নি কোন ছেলে মেয়ে। নয়াগ্রাম ব্লকের সরকারি মডেল স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আশালতা সিং , এবার দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে প্রতিকূল পরিস্থিতির বিপরীতে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। আশালতা থেকেই জানা যায়, অর্থের অভাবে পড়াশুনা ছাড়তে হয়েছিল তাঁর দাদা শ্যামসুন্দর সিংকে। কিন্তু আশালতা পড়া ছাড়েনি। সে প্রতিদিন সকালে তাঁর মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে যায় শালপাতা তুলতে। ওই পাতা বাড়িতে নিয়ে এসে রোদে শুকনো করে পাতার থালা তৈরি করা হয়। সেই থালা বাজারে বিক্রি করে যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে তাঁদের সংসার চলে। সেইসঙ্গে চলছে তাঁর পড়াশুনা।
বলাবাহুল্য, ওই এলাকায় সেচের ব্যবস্থা তেমন না থাকায় চাষাবাস প্রায় হয়না। সেই কারনেই গ্রামের একমাত্র উপার্জনের পথ জঙ্গলের শালপাতা থেকে থালা বানিয়ে বাজারে বিক্রি কর আশালতা জানায়, সারাদিন বাড়ির কাজের ব্যস্ততার মধ্যে যখনই সময় পায় তখনই বই নিয়ে বসে। এইভাবেই চলছে ওই জঙ্গল খন্ডের এক ছাত্রীর জীবন সংগ্রাম। যতই কষ্ট হোক সে তাঁর লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে জানায়। সেইসঙ্গে ওই ছাত্রী বলে যদি কোন সরকারি সাহায্য পায় তাহলে হয়তো তার স্বপ্ন পূরণ করতে সুবিধা হবে। বড়খাঁকড়ি গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান ভবেশ চন্দ্র মাহাতো আশালতার লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শুধু আশালতা নয় নয়াগ্রাম ব্লকের বিস্তৃন এলাকায় কয়েকশ ছাত্র ছাত্রীর চিত্র পায় একই। তাদের স্বপ্ন থাকলেও অভাব অনটন এর ফলে তাদের স্বপ্ন স্বপ্ন থেকে যাচ্ছে।