মাধ্যমিকে কমল অঙ্কের নম্বর, সবই কি অতিমারির অবক্ষয়?

মাধ্যমিকে কমল অঙ্কের নম্বর, সবই কি অতিমারির অবক্ষয়?

ab722ed9d4f9e9e31f79e1bb01c78ff9

কলকাতা:   প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল৷ এ বছর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১১ শতাংশ বেশি৷ যা ইঙ্গিত করে কন্যা সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে৷  এই বছর পাশের হার ৮৬.৬০ শতাংশ৷ কিন্তু, উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে অঙ্কে ৯০ থেকে ১০০ পাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা৷ শুধু তাই নয়, জীবন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল এবং প্রথম ভাষাতেও ৯০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তির হার অনেকটাই কম৷ কিন্তু কেন? টানা দু’ বছর করোনা পরিস্থিতিই কি এর নেপথ্য কারণ? 

আরও পড়ুন- একেবারেই ‘বই পোকা’ নন, মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা পড়েই মাধ্যমিকে দ্বিতীয় কৌশিকী

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের তুলনায় এই বছর ‘এএ’  গ্রেডের সংখ্যা বেড়েছে। ইংরেজিতে ৯০ থেকে ১০০ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কিন্তু, অঙ্কে ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা বেশ খানিকটা কমে গিয়েছে। ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কমেছে ভৌত বিজ্ঞানে৷ বিজ্ঞান ও ইংরেজির পাশাপাশি বাকি বিষয়গুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে ৯০ থেকে ১০০ নম্বর পাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা। উল্লেখযোগ্য কম নম্বর উঠেছে প্রথম ভাষা বাংলায়। ইতিহাস, ভূগোলেও কমেছে প্রাপ্ত নম্বর।

নম্বরের এই হেরফেরের কারণ হিসাবে অতিমারী পরিস্থিতিকেই দায়ী করেছে শিক্ষা মহলের একাংশ৷ তাঁরা মনে করছে, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায়  প্রভাব পড়েছে পড়ুয়াদের উপর৷ পরীক্ষার আগে খুব অল্পদিন ক্লাস করতে পেরেছে তাঁরা৷ ফলে ক্লাসরুমের প্রস্তুতিতে খামতি থেকে গিয়েছিল৷ বিজ্ঞানের শাখার প্র্যাকটিক্যালের অনভ্যাসও নম্বর কমার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে তাঁদের মত৷

এই বছর প্রথম ভাষায় ২৫,২২৬ জন, ইংরেজিতে ২০,১৫০ জন, অঙ্কে ৩৯,৩৮৬ জন, ভৌত বিজ্ঞানে ২৪,০৫১ জন, জীবন বিজ্ঞানে ২৫,০৫৮ জন, ইতিহাসে ১৪,৫২৩ জন এবং ভূগোলে ৩৪,৪০৮ জন পরীক্ষার্থী ৯০ থেকে ১০০-এর মধ্যে নম্বর স্কোর করতে পেরেছে। 

২০২২-এ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় যুগ্ম ভাবে প্রথম হয়েছে বাঁকুড়ার রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশন হাই স্কুলের অর্ণব ঘড়াই এবং বর্ধমান সিএমএস স্কুলের রৌণক মণ্ডল। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩। ৬৯২ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের রৌনক মণ্ডল এবং মালদহের কৌশিকী সরকার। কৌশিকীই মেয়েদের মধ্যে প্রথম৷ ৬৯১ নম্বর পেয়ে যুগ্ম তৃতীয় দুই পরীক্ষার্থী পশ্চিম বর্ধমানের অনন্যা দাশগুপ্ত এবং পূর্ব মেদিনীপুরের দেবশিখা প্রধান। 

অন্যদিকে, এই বার মাধ্যমিকের খাতা দেখতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের৷ যা দেখে চিন্তায় শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে মনোবিদরা৷ একি অতিমারীর অক্ষয়? নাকি অপারগতার অসহায়তা থেকে মানসিক বিকৃতির বিস্ফোরণ? নাকি অন্য কোনও কারণ৷ ধন্দে শিক্ষকরাই৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় খাতায় অকথা-কুকথার বন্যা৷ পরীক্ষার খাতায় অবশিষ্ট পাতা ভরে দিয়েছে গালিগালাজে৷ কেউ আবার সে ভাবে উত্তর লিখতেই পারেনি৷ তারা প্রায় গোটা খাতাটাই ভরিয়ে দিয়েছে অশ্রাব্য কথায়৷ পরীক্ষকরা জানাচ্ছেন, কোনও নির্দিষ্ট কারও উদ্দেশে নয়, উদ্দেশ্যহীন ভাবেই তারা এই সব লিখে গিয়েছে৷ শতাংশের হিসাবে এই সংখ্যাটা হয়তো খুবই নগন্য৷ তাহলেও নিশ্চিত ভাবেই এটা ভয়ঙ্কর৷