ফরাক্কা: সোজা অঙ্ক কষতে ভুল করছে পড়ুয়ারা। এইসব অঙ্ক না পারলে কি হয় নাকি? মাস্টারমশাই ক্লাসে আছেন তো কী! আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি প্রৌঢ়া। সটান ক্লাসে ঢুকে সেইসব না পারা অঙ্ক কষতে শুরু করলেন তিনি। বলা ভালো প্রতিটি অঙ্ক রীতিমতো বুঝিয়েও দিলেন পড়ুয়াদের।
ঘটনাটি দেখে রীতিমতো তখন হতবাক শিক্ষক। তিনি নিজেই ব্ল্যাকবোর্ডে ওই অঙ্ক সেখানোর ঘটনা ফোনবন্দি করেছেন। এরপর ফেসবুকে নিছকই উৎসাহের বশে আপলোড করেছিলেন। এখন সেই ভিডিও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। এক প্রৌঢ়ার এভাবে অঙ্ক শেখানোর ঘটনা রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। এর থেকেও বড় বিষয় এই ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে আছে। জানেন কী সেই ঘটনা?
ওই মহিলা পড়াশোনার সঙ্গে মোটেও যুক্ত নন। তিনি স্কুলের মিড ডে মিল কর্মী। বাচ্চাদের প্রতিদিনের রান্নাবান্নাতেই তার সময় কেটে যায়। তার যে এমন গুণ থাকতে পারে, সে খবর মাস্টারমশাইদের জানা ছিল না। ভাইরাল হওয়া এই নতুন শিক্ষিকার নাম বিশাখা পাল। ঘটনাটি মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার নয়নসুখ শ্রীমন্থপাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রৌঢ়া বিশাখা পাল সকলের কাছে বিশাখামাসি নামেই পরিচিত৷
ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটি? শিক্ষক পরেশ দাস ক্লাসে অঙ্ক শেখাচ্ছিলেন। চতুর্থ শ্রেণির কিছু পড়ুয়া অঙ্ক পারছিল না। সেইসব অঙ্ক বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সেইসময় বিশাখামাসি ঘরে ঢুকে যান। কেন এত সহজ অঙ্ক পড়ুয়ারা পারছে না? এই প্রশ্ন করে ফেলেন বিশাখা। শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে বোর্ডের উপর তিনি সেইসব অঙ্ক কষতে শুরু করলেন। যে হাতে সবজি কাটা, রান্নাবান্না, বাসন ধোয়া চলে তাতেই সযত্নে রয়েছে চক, ডাস্টার। পড়ুয়াদের সামনে ডেকে প্রত্যেকটি অঙ্ক ভালোভাবে বুঝিয়েও দিচ্ছেন। তার বোঝানোর ধরনটাও যথেষ্ট আলাদা। শিক্ষক নিজেও অবাক হয়েছেন এই ঘটনায়। সব থেকে বড় কথা প্রত্যেকটি অঙ্ক সঠিক করছেন বিশাখামাসি। কীভাবে শিখলেন তিনি এত ভালো অঙ্ক? তাকে তো কেউ কখনও স্কুলে পড়াশোনা করতেও দেখেনি।
জানা গিয়েছে, ওই প্রৌঢ়ার পড়াশোনার ইচ্ছে বরাবর। ক্লাস টেন অবধি তিনি পড়াশোনাও করেছিলেন৷ কিন্তু বাড়ির আর্থিক অবস্থা ঠিক না থাকার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। তারপর বহু সময় ঘুরে এখন ওই স্কুলের মিড ডে মিল কর্মী। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ওই স্কুলের সঙ্গেই যুক্ত আছেন। বিশাখামাসি আদ্যোপান্ত একজন প্রাণচঞ্চল মানুষ। শরীর ঝুঁকে যেতে শুরু করেছে বয়সের ভারে৷ হাতে, মুখের চামড়াতেও টান ধরেছে। কিন্তু শীর্ণকায় মানুষটার মেজাজ আর প্রাণশক্তিতে কখনও খামতি হয়নি। যেমন জোর গলায় অঙ্ক বুঝিয়েছেন, তেমনই গান কবিতার সময় নরম হয়েছে গলার স্বর। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান গাইতে শুরু করেন অনুরোধের পর৷
এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান বা কবিতার অনুরোধ আসে। এবার বিশাখা লজ্জা পেয়েছেন। কিছুতেই তিনি করবেন না। এদিকে বাচ্চারাও ডাকাডাকি করছে তাঁকে৷ শেষে কবিতা বললেন তিনি। শুধু তাই নয়, মাস্টারমশাই ভিডিও করছেন দেখে মোবাইল ধরতেও যান। উনি নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন, এই ভিডিও এবার ইন্টারনেটে দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, রান্নার কাজ হয়ে গেলেই তিনি স্কুলের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। বাচ্চাদের পড়াশোনার খোঁজ নেন। স্কুলের ৩৬০ পড়ুয়ার প্রত্যেকের উপরেই তার নজর রয়েছে। কী পড়া হচ্ছে, কেমন পড়া হচ্ছে সেইসব খবরও তিনি রাখেন ঘুরে ঘুরে।
বিশাখামাসি এই মুহূর্তে নেটদুনিয়ার মন জয় করে ফেলেছেন। কিন্তু কীভাবে তিনি এত ভালো অঙ্ক করালেন? সেই ছোটবেলায় তার মাস্টারমশাইয়ের থেকে এভাবেই অঙ্ক শিখেছিলেন তিনি। সেইভাবেই এত বছর পর অঙ্ক করালেন। এভাবেই থাকুন বিশাখামাসি, নেটদুনিয়া তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। ছবি সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″ height=”315″ frameborder=”0″>