কলকাতা: খিদেয় পেট ডাকাডাকি শুরু করলেই, আমার হাত চলে যায় মুঠোফোনের দিকে। কয়েকটা ক্লিক, আর ব্যাস, আমার পছন্দের খাবার চলে আসবে আমার বাড়ির দরজায়।বর্তমান যুগের ভোজনরসিকের জন্যফুড ডেলিভারী অ্যাপই রসনাতৃপ্তির পন্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফুড ডেলিভারি অ্যাপকারো পছন্দ হওয়ার কারণ দ্রুত এবং পরিচ্ছন্ন বলে, কেউ বা বাইরে খেতে যাওয়াকেই অপব্যায়ী আয়োজন বলে ফেলেন। এই সমস্ত মতবিরোধের মাঝে, আমার মন চলে যায় পরদা ঢাকা আধো আলো আঁধারি কোণ পুলোয়, যেখানে গরম কাটলেট আর ধোঁয়া ওঠা চা সহযোগে তুমুল তর্ক চলত; যেখানে খাওয়াটাই প্রধান নয়, আসল ব্যাপার হল আড্ডাটা। এবং এটাই কলকাতায় কেবিন কালচারের জন্মের কারণ।
প্লাইউড দিয়ে আলাদা করা, পাতলা পর্দাঘেরা এই কেবিন গুলোই মধ্যবিত্তের বাইরে খেতে যাওয়ার শুরুর দিনের সাক্ষী। এখানে সমাজের এগিয়ে থাকা অংশ থেকে রক্ষণশীল অংশ সকলেই সমবেত হত, কিছু সুখাদ্য সমৃদ্ধ সন্ধ্যার আশায়। আশাব্যাঞ্জক ভাবে, কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা এই বক্তব্য কে তুলে আনে, যে এই কেবিন সংস্কৃতির ফলে, সম্মানীয় ও রক্ষণশীল পরিবারের মহিলারাও লোকচক্ষুর আড়ালে বাইরে খেতে আসার স্বাদ নিয়ে সক্ষম হয়েছিলেন।
এখানে ৫ টি এমনই “কেবিন” এর কথা রইল,
১। ক্যাফে
শহরের অন্যতম ব্যস্ততম চৌমাথায় অবস্থিত ক্যাফে ম্যাজিকের মতন এখন বিগত বছরগুলির গন্ধ ধরে রেখেছে।
লম্বা লোহার গরাদের পেছনে লুকোনো, পুরোনো দিনের সাধারণ চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো ক্যাফেতে তাদের ওয়েটাররা সফলতার সঙ্গে ফিশ অথবা চিকেন কবিরাজী থেকে মাটন চপ পরিবেশন করে চলেছে ৮০ বছর ধরে। কলেজ স্টুডেন্ট দের মধ্যে এক প্রিয় আড্ডার জায়গা এই ক্যাফে, বিশেষত আশুতোষ কলেজের স্টূডেন্টদের।
২। বসন্ত কেবিন
পুরোনো দিনের অনেক সূত্রই দাবী করে এটি কবিরাজীর জন্মস্থল বলে। এরম একটা গল্প লোকের মুখে শোনা যায়, যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে খুশি করার জন্য বসন্ত কেবিনের প্রধান রাঁধুনী সাধারণ বিস্কুট গুঁড়োর বদলে ডিম দিয়ে , উনি এক কিংবদন্তী পদের জন্ম দেন, যা আজকের কবিরাজী। বইপাড়ার ব্যস্ত গলিতে অবস্থিত এই কেবিন ১২৯ বছর ধরে সময় কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহাত তবিয়তে টিকে রয়েছে।
৩। নিরঞ্জন আগর
১৯৯২ তে অবস্থিত নিরঞ্জন আগরের স্পেশাল পদ হল, কাসুন্দী ও সসা-পেঁয়াজ সহযোগে “ডিমের ডেভিল”। পোর্সেলিনের প্লেটে করে হাঁসের ডিমের ডেভিল খেতে এখানে ভোজনরসিক বাঙালীর ভীড় লেগেই থাকে।
৪। ফার্ন হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট
৮১ বছরের পুরোনো এই কেবিনটি তার আদি গঠনই ধরে রেখেছে এই সুদীর্ঘ সময় ধরে। পার্টিশন করা বুথ কেবিনের এই রেস্তোরাটি বারবার দেখা গেছে বাংলা চলচ্চিত্রেও (কালপুরুষ থেকে হাল আমলের সাহেব-বিবি-গোলাম)।
৫। মিত্র ক্যাফে
১৯২০ তে স্থাপিত মিত্র ক্যাফের জনপ্রিয়তা গোটা শহরেই বর্তমান। বন্ধু গনেশ মিত্র র থেকে পাওয়া ক্যাফের নাম “মিত্র”(বন্ধুত্ব) রাখেন সুশীল রায় । সেই থেকেই এই মিত্র ক্যাফে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই টিকে আছে ১০০ বছর ধরে।
এখানকার ব্রেন চপ, গন্ধরাজ লেবু দেওয়া চিকেন পকোড়া, ফিশ কবিরাজী আর চকোলেট পুডিং শুধু শ্যামবাজারই নয়, গোটা শহরেই সমান ভাবে জনপ্রিয়।