বোলপুর: ফনির দাপটে দমকা হাওয়ায় তখন ওলটপালট করে দিচ্ছে সব। তবুও তোয়াক্কা না করেই দাপটের সাথেই শনিবার সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন দিনমজুর পরিবারের গৃহবধূ খালাবর্দান বিবি। একরাশ ক্ষোভ উগড়ে বলেন, ‘‘বাড়ি করার টাকা থেকে বাইশ হাজার টাকা জোর করে নিয়ে নিয়েছে তৃণমূলের নেতারা।’’ পাশ থেকে বিধবা বেদনা দাস চিৎকার জুড়লেন, ‘‘বাড়ির গোড়টই কাঁটা হল না বিশ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে চলে গেল। জান কি আর শুধু শুধু জ্বলছে।’’
বেদনা দাসের কথা শেষ হতে না হতেই একই অভিযোগে সোচ্চার হলেন জয়ন্ত দাস, মহিবুল শেখদের মত গরিব মানুষেরা। ভোট পেরোতে না পেরোতেই শাসকের অত্যাচারে সিঁটিয়ে থাকা মানুষের এমনই প্রতিরোধী মেজাজ হার মানিয়েছে ফনির দাপটকেও। ঘটনাস্থল বীরভূমের সাহাপুর। সাহাপুর দুবরাজপুর ব্লকে। শাসক সন্ত্রাসে অতিষ্ট এক উল্লেখযোগ্য জনপদ। গ্রামের মানুষের অভিযোগ যাদের প্রতি তারা সকলেই তৃণমূলের মাতব্বর। যাদের মাথা এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শেখ এনামুল। সামান্য আনাজ ব্যবসায়ী থেকে যে এখন কোটিপতি। তার বিরুদ্ধেই জনরোষ টগবগ করছে গ্রাম। মানুষের কাছে এই নেতা পেয়েছেন ‘বড়লাট’ তকমা। তার অত্যাচারের কারণেই। বছরের পর বছর। প্রতিবাদ তো দূরের কথা মুখে রা কাড়ার জো ছিল না।
খোলস ছেড়েছে গ্রাম। হাজারো মানুষ এক হয়েছেন। অঞ্চল সভাপতির বাড়ি ঘেরাও করেছেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এই তৃণমূল নেতার পাশে থাকা তার সবসময়ের সঙ্গী মেহেরাজের বাড়ি থাকা প্রচুর বোমা, তীরের সন্ধান দিয়েছেন পুলিশকে। আওয়াজ তুলেছেন ‘এনামুল হটাও, সাহাপুর বাঁচাও’। এলাকার ত্রাস এনামুলের কাছে এখন ত্রাস গোটা সাহাপুর। জনরোষে সে এখন ঘরবন্দি। পুলিশ এখন গ্রামের মোড়ে মোড়ে। এলাকার ত্রাস এনামুলের পাহারায়!
কি করে হল এই জনরোষ ? উদাহরণ অসংখ্য। বিশাল বড় গ্রাম। ৫টা সংসদ। হাজার পাঁচেক মানুষের বাস। এনামুল বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাদ গেছেন এমন মানুষ সাহাপুরে খুঁজে পাওয়া কঠিন। গ্রামেরই শেখ নবির হোসেন। বরাবরের তৃণমূল করা ছেলে। আজ সে-ও দলের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের সাথে। সে জানায়, ‘‘গ্রামে ঢোকার মুখে ফুটবল গ্রাউন্ডে সারাদিন বসে থাকে এনামুল বাহিনী। কোনও গাড়ি পেরোনোর জো নেই ওদের তোলা না দিয়ে।’’ এনামুলের দৌলতে কথায় কথায় জরিমানা, চর-থাপ্পর, অশ্রাব্য গালিগালাজ সাহাপুরে এখন জলভাত। ক্যানেল পাড়ে থাকা পাম্প হাউসের মোটর পাম্প চুরি থেকে অসংখ্য শিশু-অর্জুন গাছ দিনে দুপুরে কেটে বিক্রি করে দেওয়া-বাদ রাখেনি কোনোকিছুই।
এলাকার সিপিএম নেতা শেখ কাশেম জানান, ‘‘ভোটের আগে হুমকি দিয়েছিল কোনও পোলিং এজেন্ট রাখা যাবে না। কিন্তু গ্রামের পাঁচটা বুথেই আমরা পোলিং এজেন্ট দিয়েছিলাম। মানুষ জোট বেঁধেছে অত্যাচারের বিরুদ্ধে।’’ আক্রান্ত মানুষেরা রীতিমত তালিকা করে বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সাহাপুরে। মানুষের রোষে তাই তো আজ ঘরবন্দি এলাকার ত্রাস। যদিও এনামুল শেখের বক্তব্য, ‘‘আমি ঘরবন্দি নই। আমি দলের গাইডলাইন মেনেই চলি। দল যা বলে তার বাইরে কিছ করি না। আমি কোনও অন্যায় করিনি।’’