ঐতিহাসিক ডেমুরিয়া রথ যাত্রার ৩০০ বছরের অজানা তথ্য

কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার রামনগর থানার ডেমুরিয়ায় এই রথের বয়স কমপক্ষে ৩০০ বছর। এই রথের ইতিহাস জানতে গিয়ে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওড়িশার বাসিন্দা মগ্নীনারায়ণ চৌধুরী বসবাসের জন্য ডেমুরিয়াতে আসেন। ইচ্ছে ছিল রথের সময় এলাকার তীর্থ যাত্রীদের পুরী দর্শনে নিয়ে যাওয়া। সেই ইচ্ছেকে পূর্ণ করতে রথের সময় বহু তীর্থ

ঐতিহাসিক ডেমুরিয়া রথ যাত্রার ৩০০ বছরের অজানা তথ্য

কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি মহকুমার রামনগর থানার ডেমুরিয়ায় এই রথের বয়স কমপক্ষে ৩০০ বছর। এই রথের ইতিহাস জানতে গিয়ে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে ওড়িশার বাসিন্দা মগ্নীনারায়ণ চৌধুরী বসবাসের জন্য ডেমুরিয়াতে আসেন। ইচ্ছে ছিল রথের সময় এলাকার তীর্থ যাত্রীদের পুরী দর্শনে নিয়ে যাওয়া। সেই ইচ্ছেকে পূর্ণ করতে রথের সময় বহু তীর্থ যাত্রীকে পুরী দর্শনে নিয়ে যেতেন।

কোনও এক বছর পুরী দর্শনে যাওয়ার পথে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় তখন তিনি স্বপ্নের মধ্যে জগন্নাথ দেবের দর্শন পান। জগন্নাথদেব তাঁকে বলেন “তোকে আর কষ্ট করে পুরী দর্শনে আসতে হবে না বরং বাড়ির কাছে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলে পুন্য লাভ হবে৷” সেই মতো মগ্নীনারায়ণ বাড়ি ফিরে গিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মাটির মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ১৭৪৩ সালে বর্গীরা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা দখল করে নেয়। ১৭৫২সাল পর্যন্ত অবিভক্ত মেদিনীপুরের দখল থাকে তাঁদের হাতে। বর্গীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও ওইসময় বহু মন্দির লুন্ঠন চালায়। তখন মগ্নীনারায়ণের উত্তরাধিকারীগণ প্রতিবেশী করুণাকরন পাহাড়ীর বাড়িতে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে লুকিয়ে রাখেন। কালক্রমে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা আর মগ্নীনারায়নের বাড়িতে ফিরে আসেননি। তখন জলামুঠোর জমিদার যাদবরাম রায় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে ভূ-সম্পত্তি দান করেন।

সেই থেকে করুণাকরণ পাহাড়িরা চৌধুরী উপাধি নিয়ে জগন্নাথ দেবের সেবার কাজে নিযুক্ত হন এবং মগ্নীনারায়ণ চৌধুরীর পরিবারের লোকজন ভোগ রান্না করে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার কাছে নিবেদন করেন। সেই সময়ের নিয়ম মেনে আজও করুনাকরন পাহাড়ীর উত্তরাধিকারগণ সেবা করেন ও মগ্নীনারায়ণের উত্তরাধিকারীগণ আজও ভোগ রান্না করে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার কাছে ভোগ নিবেদন করেন।

জগন্নাথ দেবের সেই মাটির মন্দির আজ পাকাপোক্ত ভাবে গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর পুরীর রীতি মেনে ৩০ ফুট উচ্চতার ৩টি পৃথক রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা চেপে মাসির বাড়ি যান। এই বছরও তার ব্যাতিক্রম নয়। আগে প্রতি বছরের রথ বানানো হতো কিন্তু এখন তা হয় না। গত বছর পুরীর রথ নির্মাতার বড় ছেলে অভিনন্দন মহারানার নেতৃত্বে রথের সাজ সজ্জা করা হয়। এবারেও তাঁরই নেতৃত্বে রথের সাজ সজ্জা হয়েছে বলে খবর। এই রথ মেলা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে। এই মেলায় জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সহ পাশের অন্য জেলা থেকেও মানুষজন ভিড় করেন। পুরো রথের মেলাটি সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণে। এই বছরের ডেমুরিয়া রথ কমিটির সভাপতি রামনগর ২নং ব্লকের বিডিও  মনোজ কাঞ্জিলাল ও সম্পাদক  তমালতরু দাস মহাপাত্র৷

৩০০ বছরের পুরোন ঐতিহ্যবাহী ডেমুরিয়া রথযাত্রা গতবছর থেকে এই রথ পুরীর রথের ধাঁচে তৈরি হয়েছে৷ দশ দিন ধরে চলে এই মেলা৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয় পুর্ব মেদিনীপুরে বিখ্যাত এই মেলা প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়৷ আজ এই রথ ডেমুরিয়া থেকে বালিপুখুরিয়া গ্রামে গুন্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে৷ কথিত আছে গুন্ডিচা মন্দিরে ভোগ দান করলে ভক্তদের মনসকামনা পুর্ণ হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 2 =