বরহরমপুর: বজয়া দশমীর দিন নিজের বাড়িতে রহস্যজনকভাবে খুন স্কুল শিক্ষক ও তাঁর পরিবার৷ মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের সদরঘাট লাগোয়া লেবুবাগান এলাকায় স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল, তাদের ৫ বছরের একমাত্র সন্তান অঙ্গনের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়৷ সপরিবারে শিক্ষকের খুনের প্রতিবাদে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে৷ আলমারি অবিন্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় খুনের মোটিভ ঙিরে জারি হয়েছে ধোঁয়াশা৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পারিবারিক শত্রুতার কারণে তাঁদের নিশংস ভাবে খুন করে করা হয়ে থাকতে পারে৷ যেভাবে শিক্ষা ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে যে ভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে, তাঁর পিছনে পেশাদারী খুনিদের যোগাযোগ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যেই নিহত শিক্ষকের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ তবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, সাহাপুর প্রাথমিক স্কুলের ২০০৫ সালে শিক্ষকতার চাকরি যোগদান করেন বন্ধুপ্রকাশ৷ বিয়ে করেন ৬ বছর আগে৷
সপরিবারে শিক্ষককে নিশংসভাবে খুনের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ৷ এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘শারদোৎসবের শেষে যখন বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর্ব চলছে তখন মুর্শিদাবাদে প্রাথমিক শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে কুপিয়ে খুন করার ঘটনায় আমরা শিহরিত৷ কী কারণে এই নৃশংস খুন আমরা জানি না৷ কিন্তু যে কোনও অজুহাতে যেভাবে মানুষ মানুষকে খুনের নেশায় মেতে উঠেছে তা মনুষ্যসমাজকে লজ্জা দেয়৷ পশুদের থেকে নৃশংস হয়ে উঠেছে মানুষ! অতি দ্রুত এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি৷ একইভাবে নবমীর দিন রাতে ঠাকুর দেখতে গিয়ে ১১ বছরের শিশু কন্যা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর পাওয়া যায় তার লাশ! একদিকে কুমারী পুজো চলছে, আর এক দিকে এমন বীভৎস ঘটনা সমান্তরালে চলছে৷ বারবার ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয় নয়৷ অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা বা টালবাহানা এইসব ঘটনাকে ইন্ধন দিচ্ছে৷ ক্রমাগত দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে মনুষ্যসমাজ৷ অবিলম্বে কড়া হাতে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার দাবি জানাচ্ছি রাজ্য প্রশাসন তথা রাজ্য সরকারের কাছে৷’’
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘ক্রমাগত পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি আমরা৷ সাংবাদিক বন্ধু-সহ জেলার শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সদস্যদের বলেছি বিস্তারিত খোঁজ নিতে৷ রাজনৈতিক রং ছাড়া সাধারণ মানুষকে নিয়ে প্রতিবাদ হবে৷ আগামিকাল আমাদের সদস্য শিক্ষক শিক্ষিকারা নিহত পরিবারের বাড়িতে যাবে৷ যে কোনও মূল্যে দৃষ্কৃতিদের রং না দেখে গ্রেপ্তার করে চরমতম শাস্তি দিতে হবে৷ শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর পরিবারের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা কাল মহা মিছিলের ডাক দিয়েছি৷ জিয়াগঞ্জ নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ এই প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাবে৷ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারিতে জিয়াগঞ্জ থানা ঘেরাও করব৷’’
মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের পুলিশি তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন৷ তন্ময় বাবু বলেন, ‘‘বন্ধুপ্রকাশ পাল ও তাঁর পরিবারের নারকীয় হত্যার প্রতিবাদে কাল আগামিকাল বিকেল একটি মোমবাতি মিছিল করা হয়ে জিয়াগঞ্জের নেতাজি মোড় থেকে৷ এর পরদিন ব্যারাক স্কয়ার ময়দান থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা শাসক ও এপির দপ্তর পর্যন্ত মিছিল করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে৷’’
পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের তরফে ভগীরথ ঘোষ বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্গত সাগরদিঘী সার্কেলের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, স্ত্রী ও ৮ বছরের শিশু সন্তান সহ দিন দুপুরে খুন হয়ে গেল৷ প্রশাসন এখনও পর্যন্ত নির্বিকার৷ পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা দাবি করছে৷ ও শিক্ষক পরিবারের পাশে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ সর্বদা থাকবে৷’’