নাড়ির টানে ফ্রান্স থেকে কলকাতা, বাঙালি মায়ের খোঁজে বিদেশি কন্যা

কলকাতা: ইউরোপের ফ্রান্স থেকে ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা বিদেশের এসব জায়গাগুলো হয়তো ওয়ার্ল্ড ম্যাপেই দেখেছিলেন৷ তবে আর সব দেশের মত, শহরের মত করে৷ নিছকই পড়াশোনার বিষয়৷ তবে ছোট্ট অ্যাঞ্জেলা খেয়াল করতেন বাবা-মায়ের সঙ্গে তার চেহারার কোনো মিল নেই৷ ভাই নিকোলা যদিওবা অনেকটাই তাঁরই মতো৷ কিন্তু কমিউনিটি সেন্টারে বা ক্লাসরুমে তার মত ছেলেমেয়েদের সঙ্গেও তার গড়ন বা

নাড়ির টানে ফ্রান্স থেকে কলকাতা, বাঙালি মায়ের খোঁজে বিদেশি কন্যা

কলকাতা: ইউরোপের ফ্রান্স থেকে ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা বিদেশের এসব জায়গাগুলো হয়তো ওয়ার্ল্ড ম্যাপেই দেখেছিলেন৷ তবে আর সব দেশের মত, শহরের মত করে৷ নিছকই পড়াশোনার বিষয়৷ তবে ছোট্ট অ্যাঞ্জেলা খেয়াল করতেন বাবা-মায়ের সঙ্গে তার চেহারার কোনো মিল নেই৷ ভাই নিকোলা যদিওবা অনেকটাই তাঁরই মতো৷ কিন্তু কমিউনিটি সেন্টারে বা ক্লাসরুমে তার মত ছেলেমেয়েদের সঙ্গেও তার গড়ন বা গায়ের রঙ বড়ই বেমানান৷ মনে মনে প্রশ্ন জেগেছিল তখন থেকেই৷ তাই তার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে এগিয়ে সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন ওই ফরাসি দম্পতি৷ যারা মাত্র ৭মাস বয়সে ভাতবর্ষের মাটি থেকেই দত্তক নিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলাকে৷ মাদার হাউস থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া মেনে তাকে তুলে দেওয়া হয়েছিল ওই ফরাসী দম্পতির কোলে৷

৪২ বছর আগের ওই দিনটাই অ্যাঞ্জেলাকে বিদেশিনী করেছিল৷ তাই জীবনের অপ্রিয় সত্যিটা জানার পর থেকেই জন্মদাত্রী মায়ের টান অনুভব করতে শুরু করেছিলেন৷ মা-বাবাকে সেকথা খুলে বলতে তারাই অ্যাঞ্জেলার সেই ইচ্ছাকে লক্ষ্যে পরিনত করেন৷ জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করছিলেন৷ এরপর স্কুল শেষে কলেজ আর তারপর কর্মজীবনে প্রবেশ৷ কিছুতেই সুযোগ করে উঠতে পারছিলেন না৷ কারণ ততদিনে পেশায় একজন ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেছেন অ্যাঞ্জেলা কেল্‌ড৷ ইন্টারনেটে অবশ্য খোঁজ খবর চলছিল৷ দত্তক সংক্রান্ত নথি থেকেই জানতে পেরেছিলেন জন্মদাত্রী মায়ের নাম আর কলকাতার সেই হসপিটালের ঠিকানা৷

২১ নভেম্বর, ১৯৭৭-এ রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের জে এন রায় হাসপাতালে জন্ম দেওয়ার পরেই নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন কুমারী মা লিলি সিং৷ কার্যত তার অনাথ কন্যাসন্তানের ঠাঁই হয়েছিল মাদার হাউসে৷ সেই হসপিটালের ঠিকানার সূত্র ধরেই ফ্রান্স থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছিল৷ বহু চেষ্টার পর ফেসবুকে যাবতীয় নথিপত্র দেখার পর৷ হাসপাতালের রেকর্ড পরীক্ষা করে হাসপাতালেরই এক ডাক্তার সাহায্যের আশ্বাস দেন অ্যাঞ্জেলাকে৷

নাড়ির টানে ফ্রান্স থেকে কলকাতা, বাঙালি মায়ের খোঁজে বিদেশি কন্যা

কুমারী মা, সামাজিক লজ্জা এড়াতেই হয়তো জন্মের পরেই ছেড়ে গেছিলেন সদ্যজাত কন্যা সন্তানকে৷ তারপর আর কোনো খোঁজ নেননি৷ হয়তোবা নাড়ির টানে ৭ মাসের মধ্যে একবার হলেও খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু ততদিনে অ্যাঞ্জেলা বিদেশী মা-বাবার সান্নিধ্য পেয়েছেন৷ কিন্তু তাতে কোনো ক্ষোভ বা অভিমান নয় বরং মেয়ের মতই মায়ের প্রতি টান অনুভব করেন অ্যাঞ্জেলা৷ তার কথায় মা তো মা-ই হয়৷ তাই প্রকৃত জন্মদাত্রীকে জীবনে একটিবার চোখে দেখার প্রবল ইচ্ছা সব বাঁধা কাটিয়ে অ্যাঞ্জেলাকে পৌঁছে দিয়েছে ভারতের মাটিতে৷ সমস্যা হচ্ছিল ভাষা৷ কারণ জন্মসূত্রে বাঙালি হলেও বাংলা তো দূরঅস্ত ভারতের কোনো ভাষাই যে তার জানা নেই৷ শুধুমাত্র নিজের জন্ম পরিচয় সংক্রান্ত নথি আর জন্মদাত্রী মায়ের নাম সম্বল করেই উড়ে আসছিলেন ভারতে৷

তবে ঈশ্বর সহায় ছিলেন বলেই হয়তো প্লেনেই আলাপ হয় প্যারিসের প্রবাসী বাঙালি, বাটানগরের স্নেহদীপ কায়েতের সঙ্গে৷ ফরাসি ভাষায় পোক্ত স্নেহদীপ৷ ওনাকেই সঙ্গে নিয়ে এখন যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ আশা ক্ষীণ হলেও এখনই নিরাশ হতে রাজী নন অ্যাঞ্জেলা৷ এখন কলকাতাতেই আছেন৷ ৩রা ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে থাকার অনুমতি আছে৷ জন্মদাত্রী মা-কে খুঁজে পেতে নিজের শিকড়, নিজের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে চিনে নিতে তার সমস্ত প্রচেষ্টায় পাশে আছে অ্যাঞ্জেলার ফরাসি পরিবার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 14 =