কলকাতা: এনআরসি ও সিএএ-র বিরোধিতায় বুধবার ৮ জানুয়ারি দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাম শ্রমিক সংগঠন৷ রাজ্যে সেই ধর্মঘটকে সমর্থন করছে কংগ্রেসও৷ তবে স্বভাবসিদ্ধভাবেই অন্যান্য ধর্মঘটের মত এই ধর্মঘটেরও বিরোধিতা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে ধর্মঘটে সায় না থাকলেও ইস্যু গুলিকে সমর্থন করেন বলেই জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্টতই জানিয়েছেন যে নাগরিকত্ব ইস্যুতে দেশজুড়ে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিবাদ চলছে তাই ধর্মঘটের ফলে যে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয় সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে ধর্মঘটের দিন রাজ্য সরকার ও সরকার পোষিত সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলেই জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন৷ সোমবার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর নবান্ন থেকে এবিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করেন অর্থদপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী৷ ধর্মঘটের দিন রাজ্য সরকার ও সরকার পোষিত সংস্থার কর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলেই উল্লেখ করা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়৷ এমনকি ওইদিন কোনো কর্মী ছুটি নিলে শোকজের পাশাপাশি তাঁর একদিনের বেতন কাটা যাবে বলেও জানানো হয়েছে৷ নির্দেশিকা অনুযায়ী ধর্মঘটের আগের দিন বা পরের দিন কোনও কর্মী সিএল পর্যন্ত নিতে পারবেন না৷
অন্যদিকে ধর্মঘটের দিন পরিবহন পরিষেবা সচল রাখতেও জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রাজ্য পরিবহণ দপ্তর৷ সূত্রের খবর, বুধবার প্রতিটি জেলা সহ তিনটি নিগমের দপ্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে৷ কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে পরিবহণ ভবনেও৷ কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হবে৷ ধর্মঘটের দিন নিগমগুলি অতিরিক্ত বাস চালাবে৷ পাশাপাশি পরিষেবা সচল রাখতে বাস-ট্যাক্সি-ট্রাকের মালিক সংগঠন, অটো ইউনিয়নগুলির কাছেও আর্জি জানিয়েছেন পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরা৷
অ্যাপ ক্যাবের ক্ষেত্রেও সার্জ প্রাইস না নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে৷ উল্লেখযোগ্যভাবে, ধর্মঘটের দিন যানবাহনের কোনো প্রকার ক্ষতি হলে বিমার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে দপ্তর সূত্রে জানা গেছে৷ অন্যদিকে সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন জোর করে ধর্মঘটে প্রশাসন বাধা দিতে এলে যদি কোনো ক্ষতি হয় তার জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার৷ পাশাপাশি প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাম নেতা অনাদি সাহু জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী না চাইলেও ধর্মঘট হবেই৷
তিনি বলেন, ধর্মঘটের সমর্থনে বুধবার সকাল ৬টা থেকে শহর ও গ্রামে মিছিল, পিকেটিং রাস্তা ও রেল অবরোধও করা হবে৷ সার্কুলার জারি করে কর্মচারীদের মনোবল ভাঙা যাবে না৷ পুলিস বলপ্রয়োগ করে ধর্মঘট ভাঙার চেষ্টা করলে তার পরিণামের জন্য দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ উল্লেখ্য, দেশজুড়ে এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদ সহ শ্রমিক ছাঁটাই, ইপিএফ-সহ সমস্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে হস্তক্ষেপ, শ্রম আইনে বদলের উদ্যোগ,দেশজুড়ে আর্থিক সঙ্কট নিরসন সহ ১২ দফা দাবিতে দেশজুড়ে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে৷ ১৭টি বাম দলের তরফে বিমান বসু বুধবারের ধর্মঘট সফল করার আবেদন জানিয়েছেন৷