কিংকর অধিকারী: অনেকেই আমরা অপরাধীদের এনকাউন্টারে শাস্তি(মৃত্যু) চাইছি। বীভৎস নারকীয় ঘটনার সঠিক বিচার বা অতি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া না থাকার কারণে আজ অধিকাংশ মানুষ এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি যে এটি কত ভয়ঙ্কর হতে পারে? কারণ প্রাথমিকভাবে যেসব অপরাধীদের ধরা হয় তা পুরোপুরি সন্দেহের ভিত্তিতে। বিচার না করে যদি সন্দেহের বশে ধরে ফেলার সাথে সাথে গুলি করে মেরে দেওয়া হয় তাহলে প্রকৃত দোষীরা সবক্ষেত্রে শাস্তি পাবে কি? অনেক সময় প্রকৃত দোষীকে আড়াল করতে নিরীহদের ধরেই ফিনিশ করে জনরোষকে চাপা দেওয়া এবং সস্তা বাহবা পাওয়ার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছ থেকেই আমরা অপরাধীদের কথা জানতে পারি। আর সেখান থেকেই আমাদের মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পুলিশের ভূমিকা বহু ক্ষেত্রেই যে কি তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এমন বহু নজির রয়েছে আমাদের রাজ্যে/দেশে যেখানে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবক্ষেত্রেই যদি সন্দেহের বশে গ্রেপ্তারের সাথে সাথে এনকাউন্টারের দাবি তুলি তাহলে তার পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। যা বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে আপনার আমার জীবনেও। কোনো প্রতিবাদী চরিত্রকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে এনকাউন্টার করলে বহু মানুষ প্রকৃত সত্য না জেনে হয়তো হাততালি দেবে কিন্তু আসল সত্যটি অন্তরালেই চাপা পড়ে যাবে। অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নামকরা কত সব ধর্ষক সহ বড় বড় অপরাধী আজও জামিনে মুক্ত। আপনি যতই দাবি তুলুন তাদের কোনদিন এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হবে না।
খুনি ধর্ষকদের শুধু শাস্তি নয়, শাসকের ছড়িয়ে দেওয়া মদ ও অপসঃস্কৃতির বিরুদ্ধেও লড়াইটা আজ অত্যন্ত জরুরি। তাই আমাদের দাবি হওয়া উচিত সামগ্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, বিলম্বিত বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। কেন তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অতি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে না? উপযুক্ত তদন্ত এবং অতি দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হতে হবে আমাদের সবাইকে। জনরোষকে যদি আমরা এভাবে পরিচালিত করতে পারি তাহলে অতি দ্রুত প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে।
মতামত লেখকের নিজস্ব৷