কলকাতা: কলকাতা পুরনিগম-সহ ৯৩ টি পুরসভার খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই৷ কিন্তু বাকি থাকল সিউড়ি আর বোলপুর৷ সেখানে এখনও ডিলিমিটেশনের কাজই শেষ হয়নি৷ সংরক্ষণের খসড়া হিসেবে প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি৷ তার জেরে এপ্রিলে ওই দুই পুরসভার ভোট নিয়ে তৈরি হয়ে গেছে জটিলতা৷
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, যেকোনও পৌরসভা ও পৌরনিগমের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তৎপরতা ৷ নিয়মমতো নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কিংবা পৌরনিগমের আসন কিংবা ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে কি না ৷ রাজ্য প্রশাসন সেই বিষয়ে সবুজ সংকেত দিলে সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলাশাসককে সেই কাজ করার নির্দেশ দেয় কমিশন ৷
অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের ১১১ টি পৌর নিগম এবং পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে কিংবা হবে৷ দার্জিলিঙের পৌরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই সূত্রে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ১১২টি ৷ রাজ্যের যে কটি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের ডিলিমিটেশন বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছিল প্রশাসন, তার প্রায় সবকটি শেষ করে ফেলা হয় যথাসময়ে ৷ শুধুমাত্র বাকি রয়ে গেছে সিউড়ি এবং বোলপুরের ডিলিমিটেশনের কাজ ৷ যদিও বীরভূম প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সিউড়ি ডিলিমিটেশনের খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তরফে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে ডিলিমিটেশনের চূড়ান্ত নোটিফিকেশন জারির কথা বলা হয়নি ৷ অর্থাৎ সিউড়ির জটিলতা প্রায় কেটে গেছে ৷ কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, বোলপুর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বিস্তর৷
সূত্রের খবর , প্রাথমিকভাবে যে ডিলিমিটেশন করা হয়েছিল বোলপুরের ক্ষেত্রে, তাতে বিশ্বভারতী দুটি ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে যায় ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে ৷ তাতে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে ৷ অন্যদিকে, বোলপুর পৌরসভার সীমানা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন ৷ সেটি আপাতত নবান্নের বিবেচনাধীন ৷ জানা গেছে, বোলপুর লাগোয়া একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের থেকে বড় অংশ বোলপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে৷
এই বিষয়ে নবান্নের সবুজ সংকেত পেলে তারপর নতুন করে সীমানা নির্ধারণ হবে ওই পৌরসভার৷ সূত্র জানাচ্ছে, সেই কাজ করতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে৷ অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে সেই কাজ শেষ হওয়া সম্ভব নয়৷ এরপর করতে হবে সংরক্ষণের তালিকা প্রস্তুতের জটিল অঙ্ক৷ এই কাজ সিউড়ি এবং বোলপুরের একসঙ্গেই শুরু হতে পারে ৷ সেই কাজ শেষ হতে মাঝ ফেব্রুয়ারি গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা৷ জেলা প্রশাসনের তরফে সেই কাজ শেষ হওয়ার পর তা পাঠানো হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে৷ তারপর প্রকাশ করা হবে সংরক্ষণের খসড়া৷ এই পুরো প্রক্রিয়া ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়া খুবই কঠিন বলে মেনে নিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷
রাজ্যের পৌর আইন বলছে, সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের ন্যূনতম ৭০ দিন পরে ভোট করতে হয় ৷ সেক্ষেত্রে যদি ফেব্রুয়ারির শেষেও সংরক্ষণের খসড়া প্রকাশ করা হয়, তবে এপ্রিলের মধ্যে ভোট হওয়া সম্ভব নয় ৷ আবার এপ্রিলের ২৪ কিংবা ২৫ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস ৷ ওই সময় ভোট করার পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এর আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন ৷ সেক্ষেত্রে রমজানের পরে ওই দুই পৌরসভার ভোট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷