নয়াদিল্লি: বিশ্বের দরবারে প্রশ্নের মুখে মোদি সরকারের 'ওয়ান ইন্ডিয়া'দেশের গনতন্ত্র বিপন্ন, বলছে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা 'ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট'-এর সমীক্ষার রিপোর্টে ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে ৪১ থেকে ৫১-তে নেমে এসেছে ভারত। মূলত পাঁচটি ধাপে একটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ এর মান নির্ণয় করা হয় এই ইনডেক্সে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সরকারের কাজ, রাজনীতি, রাজনীতির প্রকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মোদি সরকারের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনার জোয়ারে অর্থনীতির মত দেশের গণতান্ত্রিক নীতির সূচকেও পতনের ইঙ্গিত। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জারি হওয়া বিধিনিষেধ এবং অসম এনআরসি -দু’টি ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত ধাক্কা খেয়েছে ভারতের গণতান্ত্রিক পরিবেশ।
সঙ্গে তাল মিলিয়েছে এনআরসি, সিএএ, এনপিআর ইস্যুতে দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদের ঝড়। যা নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে দেশের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছে দি ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। প্রতি বছরই বিশ্বের ১৬৫টি স্বাধীন দেশ ও দু’টি অঞ্চলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে সমীক্ষা চালায় এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। গতবারের তুলনায় গণতন্ত্র রক্ষা করার সূচকে এবার একেবারে ১০ ধাপ নীচে নেমে গিয়েছে ভারত। নির্ধারিত ০-১০ স্কোরের মধ্যে ২০১৮ সালে ভারত পেয়েছিল ৭.২৩। কিন্তু ২০১৯ সালে ভারতের স্কোর নেমে দাঁড়িয়েছে ৬.৯০-তে। উল্লেখযোগ্যভাবে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলির মধ্যে মালয়েশিয়া, তাইওয়ানের থেকেও পিছিয়ে রয়েছে ভারত।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে মুখে যত বড় বড়ই কথা বলুন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা সমীক্ষায় বলছে অন্য কথা। এক্ষেত্রে সমীক্ষায় যে বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানের ৩৫এ ধারা তুলে নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের মানুষের জমি কেনার অধিকার দেওয়া হয়েছে। গত বছর ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের উপর নানান বিধিনিষেধ,বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন এবং দীর্ঘদিন মোবাইল সংযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া, পাশাপাশি সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা, এই সমস্ত কারণে সেখানকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হয়েছে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষেরও বেশি মানুষের নাম। একইসঙ্গে ভারতের সূচক নীচে নামার জন্য এনআরসিকেও দায়ী করা হয়েছে সমীক্ষায়। তবে ‘ইকোনমিস্ট ইনডেক্স ইন্টালিজেন্স ইউনিট’-এর সমীক্ষাতে আরও যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে উঠে এসেছে তাহল, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি। এভাবে চলতে থাকলে ২০৬০ সালের মধ্যে বিশ্বে সবথেকে বেশি মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করবে ভারতে। বিশ্বে গণতন্ত্র রক্ষার সূচকে সবার প্রথমে রয়েছে নরওয়ে (৯.৮৭) এবং সবার শেষে উত্তর কোরিয়া (১.০৮)। চীন ১৫৩, পাকিস্তান ১০৪, শ্রীলঙ্কা ৬৯ এবং বাংলাদেশ রয়েছে ৮০ নম্বরে।
সুতরাং, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ইস্যুতে দেশের বিরোধী দলগুলির একের পর এক অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিজেপি শাসকগোষ্ঠী যখন বেপরোয়া এবং একগুঁয়েমি মনোভাব পোষণ করছে। তখন দি ইকনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-এর এই সমীক্ষা বিরোধিতার আগুনে ঘৃতাহুতি দিল বলাই যায়।