বাড়ি-বাড়ি আসছে পুরসভার দূষিত জল, লাফিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের ব্যবসা, বাড়ছে ক্ষোভ

বাড়ি-বাড়ি আসছে পুরসভার দূষিত জল, লাফিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের ব্যবসা, বাড়ছে ক্ষোভ

হাওড়া: পুরসভার জলের কলে আসছে দূষিত জল।  সেই জল পান করে পেটের সমস্যায় ভুগছেন বহু মানুষ। এমটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমনকী গুরুতর অসুস্থ হয়ে সত্যবালা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অনেকেই। গাঁটের পয়সা খরচ করে উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দাদের  অনেকেই জল কিনে খাচ্ছেন।গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ছবি   উত্তর হাওড়ার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন  এলাকার। জানুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত ২৬১জন মানুষ পেটের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন সত্যবালা আই ডি হাসপাতালে বলে হাসপাতালসুত্রে  জানা গিয়েছে। পুরসভায় এবং স্থানীয় ১নম্বর বোরো অফিসে বিষয়টি  জানালেও এখন পর্যন্ত মেলেনি সুরাহা।  

গত প্রায় কয়েক সপ্তাহ  ধরে উত্তর হাওড়ার ১,২,৩,৪,৬-সহ বেশ কয়েকটি  ওয়ার্ডের  কিছু কিছু এলাকায় পুরসভার টাইমকলের জলের রঙ কিছুটা লাল।সঙ্গে দুর্গন্ধ রয়েছে  বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কৃষ্ণ তারণ নস্কর লেন, লালবিহারী বোস লেন, দূর্গাপালের মাঠ, দয়ারাম নস্কর লেন, নবীন ঘোষ লেন, পালেরবাগানের মাঠ  প্রভৃতি এলাকায় এই রকমের দূষিত জল সরবারহ হচ্ছে। সেই জল পান করে ইতিমধ্যেই শতাধিক মানুষ পেটের সমস্যায় আক্রান্ত।  পেটে ব্যাথা-সহ নানান উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। ৮ থেকে৮০ বাদ নেই কেউই। স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি অনেককেই ছুটতে হয়েছে সত্যবালা আই ডি হাসপাতালে।   শারীরিক অবস্থার কারণে বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে ইতিমধ্যেই ভর্তি করতে হয়েছে হাসপাতালে।  ইতিমধ্যেই ১নম্বর বোরো অফিসে এবং হাওড়া পুরসভায় মৌখিকভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। দয়ারাম নস্কর লেনের বাসিন্দা কাকলী পাখিরা জানান,  সকালে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত যে জল আসে তা ঘোলা, লালচে রঙের, এবং দুর্গন্ধযুক্ত।  সেই জল খেয়ে পেটের সমস্যা হচ্ছে।   তাই বাধ্য হয়ে পানীয়জল কিনে খেতে হচ্ছে। পুরসভাকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি বলেও জানান তিনি।   

স্থানীয় সত্যবালা ইনফেকসাশ ডিজিজ হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডঃ সুস্মিতা দাসগুপ্ত বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই উত্তর হাওড়ার বেশ কিছু এলাকার মানুষ পেটের সমস্যার কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওইসব এলাকা থেকে মোট ২৮জন রোগী বর্তমানে  হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।  তিনি আরো জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে জলের কারণেই এই সংক্রমণ হয়েছে।  সত্যবালা আই ডি হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ তাহের আখতার বলেন, “প্রাথমিকভাবে পানীয়জলের কারণেই ডাইরিয়ার এই সংক্রমণ বলে মনে হচ্ছে।  তবে  ঋতু পরিবর্তনের সময়েও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে”। তিনি আরো জানান,  জানুয়ারি মাসে ২৬১জন ডাইরিয়া আক্রান্তের চিকিৎসা করা হয়েছে।   

সত্যবালা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি  ২নম্বর ওয়ার্ডের মালিপাঁচঘড়ার বাসিন্দা যশোদা প্রজাপতি জানালেন, মঙ্গলবার রাত থেকে পেটে যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।  অন্যদিকে  ১নম্বর ওয়ার্ডের ঘুসুড়ির বাসিন্দা আরতি সাউ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে  জানালেন, টাইমকলের জল খেয়েই পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এই ঘটনার বিষয়ে চিকিৎসক ও বিজেপির ডক্টর সেলের কনভেনর ডঃ সুজয় পালিতের অভিযোগ, বিষয়টি পুরসভার নজরে আনা হলেও কিছুই করেনি পুরসভা। যদিও ছুটির দিন হওয়ায় কথা বলা যায়নি পুর আধিকারিকদের সাথে। হাওড়ার পুর কমিশনার তথা পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি  জানান, গত ২-৩দিন আগে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছে।  জলে কিভাবে এই সমস্যা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 1 =