জলপাইগুড়ি: পর্যটক ভরা মরশুমে জনশূন্য গোসাইরহাট ইকো পার্ক। ডুয়ার্সের অতি পরিচিত গোসাইরহাট ইকো পার্ক হারাতে বসেছে জৌলুস , বন দপ্তর এর চরম উদাসীনতায় বিপন্ন হতে বসেছে গোঁসাইয়ের হাটের পাখিরালয়। পুটিমারি গোসাইরহাট ইকো পার্কের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ীরা সংস্কার না হওয়ায় আগের মত আর পাখি আসছে না এখানে। কয়েক বছর আগেও এখানকার মনোরম ঝিলের আকর্ষণে সারা বছরই ভিড় জমাতো প্রচুর দেশী বিদেশী পাখির ঝাঁক। প্রায় ৪৮ থেকে ৫০ প্রজাতীর এখানে আসতো । স্নেক নেক বার্ড (Anhinga), লেজার হুইসলিং ডাক , চকাচকি, গুড়িয়াল, ডাহুক, জল মুরগি, অল্প কিছু জলপিপি, পানকৌড়ি, মত সরাল প্রজাতির একাধিক পরিযায়ী পাখি।
বছরের অন্যান্য ঋতুতে ও পাখিদের দেখা মিলত হামেশাই । তাই পাখির ডাকে ঘুমিয়ে , পাখির ডাকে জেগে ওঠায় দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল পাখিরালয় সংলগ্ন খুকলুং রাভা বস্তি বাসিন্দাদের। কিন্তু বর্তমানে সেই ইকো পার্কের বেহাল অবস্থা । সংস্কার না করায় ঝিলের মধ্যে জমে রয়েছে প্রচুর কচুরিপানা আর এর ফলে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আর ভিড় জমাচ্ছে না। এক সময় এই পাখি দেখতে ছুটে আসত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক , পাখিপ্রেমী এবং পাখি বিশেষজ্ঞর থেকে দেশি বিদেশী পর্যটকরা। কিন্তু বর্তমানে সেই পক্ষীরালয় ও ইকো পার্ক টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের জন্য। নেই কোনও পাহারা, নেই নজরদারি বনদপ্তরের। যার ফলে একদিকে যেমন চোরা শিকারিরা মেরে নিয়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখি। তেমনি বাড়ছে অসামাজিক কাজ পরিত্যক্ত কটেজ গুলিতে।
তৈরি করা কটেজ গুলির সমস্ত কিছু চুরি হয়ে গিয়েছে। নেই আসবা পত্র, খাট, বিছানা। এমনকী জানালা, দড়জাও খুলে নিয়ে গেছে নজর মিনারের। নজর দারি না থাকায়। গোটা এলাকা জুরে পরে রয়েছে প্লাস্টিকের গ্লাস , থালা , মদের বোতল। এলাকার বাসিন্দা অথা বন সুরক্ষা কমিটির সদস্য রবি রাভা বলেন, “ উদ্বোধনের পর থেকেই দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছিলো। বন দপ্তরের নজর দারি ও পরিচর্যা না থাকায়। পাখিরালয় ও জলাশয়টি সঠিক ভাবে পরিচর্যা না করায় আগের মত পাখি আসে না। পরিযায়ী পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে দুস্কৃতীরা। এমনকী, কটেজের আসবাপত্র খাট লেপ ,বালিস সব চুরি হয়ে গেছে।”
এলাকাটির বর্ণময় পরিবেশ ও বৈচিত্র লক্ষ্য করে ২০০৬ সালে রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত বনমন্ত্রী যোগেশ চন্দ্র বর্মন নিজে উদ্যোগী হয়ে ঝিলের সংরক্ষণের এবং জল সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যার ফল মিলেছে হাতেনাতে বছর কাটতে না কাটতেই আদর্শ পরিবেশের খোঁজে পেয়ে পরিযায়ী পাখিরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে এই জলাশয়। আর পাখিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল গোসাইরহাট এই ঝিলটি। স্থানীয় খুকলুং, রাভা বস্তির বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করে তোলার উদ্দেশ্যে এই ঝিলের সংস্কার করা হয়। তৈরি করা হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার ও পর্যটকদের রাত্রি বাসের জন্য দুটি সুদৃশ্য কটেজ। শীতকালে যাতে পর্যটকরা ঘুরতে এসে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারে বা পাখি গবেষকরা এখানে থেকে পাখিদের গবেষণা করতে পারে সেজন্য। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোও আরো জরাজীর্ণ অবস্থা তাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থেকে পর্যটকরাও সকলেই চান দ্রুত সংস্কার করা হোক এই গোসাইরহাট পক্ষীরালয়টির নজরদারি বারাক বনদপ্তর।
রাভা বস্তির বাসিন্দা তথা রাভা শিল্পী সিতেন রাভা বলেন , “ ইকো পার্ক টি আবার সরকার চালু করুক আগের মত। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। তাহলে এলাকার উন্নতি হবে বেকার যুবক যুবতীরা কাজ পাবে।” ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ সরকার বলেন, বহু দিন থেকে গোসাইয়ের হাট পার্ক টি বন্ধ রয়েছে। আগের মত পরিযায়ী পাখি আর আসে না। বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে ঝিল টি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কচুরিপানা তে ভরে গিয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা উচিত। ঘুরতে আসা পর্যটক সুমন টেমানি বলেন, এখন গোসাইয়েরহাট ইকো পার্কে পর্যটক দের ঢুকতে দেওয়া হয় না। পার্কটি পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগে এই সময় টাতে প্রায় ৪০-৫০ প্রজাতীর পাখি আসতো। এখন আর আসেনা। সব কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে বন দফতরের নজর দারির অভাবে। দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
রাজ্যের বন মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জী বলেন, “পার্কটি জলাশয় সংস্কার দ্রুত করা হবে। আধিকারিকদের বলা হয়েছে গোসাইয়ের হাট ইকো পার্কের কটেজগুলি ও জলাশয়টি সংস্কারের জন্য। এবং খুব শীঘ্রই খুলে দেওয়া হবে। নজরদারিও বাড়ানো হবে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে সচেতন হতে হবে শুধু আইন করলে আটকানো সম্ভব নয়।” জলপাইগুড়ির ডি এফ ও মৃদুল কুমার বলেন, খুব শীঘ্রই চালু করা হবে গোসাইয়ের হাট ইকো পার্কটি পাখিদের জলাশয়টি ও পরিষ্কার করা হবে। বন মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে এই অর্থ বর্ষে পর্যটক দের জন্য খুলে দেওয়ার।