‘উদ্বাস্তুরা সকলেই নাগরিক’, ফের বিজ্ঞাপন রাজ্যের, তুঙ্গে চর্চা

‘উদ্বাস্তুরা সকলেই নাগরিক’, ফের বিজ্ঞাপন রাজ্যের, তুঙ্গে চর্চা

কলকাতা: নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে জ্বলেছে গোটা দেশ৷ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামে তাণ্ডব দেখেছে গোটা বাংলা৷ টানা দু’দিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ৷ পাক সার্কাস থেকে শাহিনবাগ, নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে চলছে প্রতিবাদ অবস্থান-বিক্ষোভ৷ আর এই নাগরিক আইন নিয়ে গোটা দেশজুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জন্মেছে, ঠিক তখনই দ্বিতীয় দফায় ‘নাগরিক’ বিজ্ঞপন রাজ্যের৷
কেন্দ্রের তরফে যখন আইন কার্যকর করে জানানো হচ্ছে, প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার, ঠিক তখনই রাজ্যের তরফের বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হচ্ছে, ‘উদ্বাস্তুরা নাগরিক’৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের ‘নাগরিক’ তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে  নয়া জল্পনা৷

এক আগে নাগরিক আইনের প্রতিবাদে সরাসরি রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছিল বিজ্ঞাপন৷ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সেই বিজ্ঞাপনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়৷ এবার সেই বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়ার পর এবার নতুন চেহারায় রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শুরু হয়েছে নয়া চর্চা৷ বাংলার প্রথম শ্রেণির টেলিভিশন চ্যানেলে ফলাও করে রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হচ্ছে, ‘উদ্বাস্তুরা নাগরিক’৷ আর এই উদ্বাস্তুদের জন্য রাজ্য সরকার কী করেছে, তার ফিরিস্তিও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে৷

বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে রাজ্য সরকার আইনত স্বীকৃতি দিয়েছে৷ প্রত্যেক পরিবারকে নিঃশর্তে জমির দলিল প্রদান করা হচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা৷ নিঃশর্তে জমির দলিল এবং নতুন করে যে কলোনিগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা জমির দলিল পাবেন৷ রাজ্য সরকারকে ফ্রি হল্ড টাইটেল ডিড বা এফএইচটিডি-সহ অন্যান্য সুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর৷ উদ্বাস্তুরা সকলেই নাগরিক৷ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সব উদ্বাস্তু কলোনিকে রাজ্য সরকার আইনত স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রত্যেক পরিবারকে নিঃশর্তে জমির দলিল প্রদান করা হচ্ছে৷ উদ্বাস্তুরা সকলেই নাগরিক৷ ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর রাজ্য সরকার কর্তৃক প্রচারিত৷’’

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, ‘‘সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকল, ভুল বোঝাবুঝি করবেন না৷ কোনরকম ভাবে উত্তেজনা ছড়াবেন না৷ প্ররোচনায় পা দেবেন না৷ কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান দেবেন না৷ সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে কান দেবেন না৷ নিশ্চিন্তে থাকুন, বাংলায় CAB-NRC হচ্ছে না৷ নাগরিকত্ব বিল কার্যকর হচ্ছে না৷ এনআরসি হবে না৷ কারণ এখানে আমাদের সরকার চলছে৷ এই কাজ করতে গেলে কাজ রাজ্য সরকারের করতে হবে৷ কেন্দ্র সরকার আইন পাশ করলেই সেটাকে কার্যকারী করতে হয় রাজ্যকে৷ এটা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত, এটা আমরা করবো না৷ আমরা বলেই দিয়েছি৷’’ বলেন, ‘‘সাংবিধানিক অধিকার, আমরা সবাই ভোটার৷ সবাই নিশ্চিন্তে থাকুন, ভালো থাকুন৷ সুন্দর থাকুন৷ দয়াকরে রাস্তা অবরোধ করবেন না৷ এবং আইন কোথাও হাতে তুলে নেবেন না৷ কোন উস্কানিতে পা দেবেন না৷ কারণ মানুষের খুব সমস্যায় হয়৷ মানুষ ভালো থাকুক এটাই আমরা চাই৷ এটাই আমাদের সকলের ইচ্ছা৷ আসুন আমরা সবাই মিলে নাগরিকত্ব বিল ও এনআরসির বিরুদ্ধে সবাই মিলেমিশে আমরা জনমত তৈরি করি৷ সবাই মিলেমিশে কাজ করি৷ কারও সঙ্গে কারও ভেদাভেদ না করে৷ এটা আমাদের কাছে আপনার আবেদন৷’’

ভিডিও শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক জনস্বার্থে প্রচারিত অংশে বলা হয়েছে, ‘‘NO CAB, NO NRC. আমরা চাই ঐক্যবদ্ধ ভারত৷ আমরা সবাই নাগরিক৷ সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবনের আদর্শ৷ কাউকে বাংলা ছাড়তে দেবো না৷ নিশ্চিন্তে থাকুন, শান্তিতে থাকুন৷ এনআরসি হতে দিচ্ছি না দেব না৷’’ যদিও এই বিজ্ঞাপন গত ২৩ ডিসেম্বর বন্ধ করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ৷ হাইকোর্টের তরফে সেই বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়ার পেয়ে এখনও দেখা যাচ্ছে সেই বিজ্ঞাপন৷ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 4 =