নয়াদিল্লি: শুক্রবার হায়দ্রাবাদে এনকাউন্টারের ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে৷ ২৭ বছরের পশুচিকিৎসক তরুণীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনের মৃত্যু হয় পুলিশের এনকাউন্টারে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দিনভর উত্তাল ছিল দেশের সংবাদমাধ্যম৷ তখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিতেও গুরুত্ব পেয়েছে এই খবর৷
‘দ্যা গার্জিয়ান’ পত্রিকায় লেখা হয়েছে এই এনকাউন্টারের ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে হায়দ্রাবাদ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে৷ পুরো ঘটনায় অস্পষ্টতা থাকায় এনকাউন্টার কে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং অর্থাৎ ন্যায়ের জন্য জন্য হত্যা বলেই উল্লেখ করেছে এই আন্তর্জাতিক পত্রিকা৷ ঘটনার পর এবিষয়ে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে পত্রিকায় বলা হয়েছে ,ভারতীয়দের মধ্যে এই ঘটনাকে নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে৷ কারো মতে এটি দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার৷ আবার অন্যদের মতে এই মামলায় পুলিশ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে৷
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, পুলিশ বলছে ঘটনাটির পুনর্নির্মাণ ভোর ৫.৪৫ থেকে ৬.১৫-র মধ্যে করা হয়েছে৷ যখন পুলিশের হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জন পালানোর চেষ্টা করছিল এবং পুলিশের ওপর গুলি চালিয়েছিল তখন একজন পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছে যে ভোর সাড়ে তিনটের সময় ওই চার অভিযুক্তকে এনকাউন্টারে মারা হয়৷ সময় নিয়ে সংশয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ কোন ব্যাখ্যা দেয়নি৷
ব্রিটিশ নিউজ ওয়েবসাইট বিবিসির মতে, পুলিশের তদন্তে বেশিরভাগ ভারতীয় খুশি হয়েছেন কারণ দেশের আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলে৷ অর্থাৎ, ন্যায়বিচার পেতে অনেক সময় কয়েক বছর এমনকি কয়েক দশক কেটে যায়৷ বিবিসি আরও উল্লেখ করেছে, গত সপ্তাহে হায়দ্রাবাদের ঘটনার পর দেশের জনসাধারণ এটাই ভাবতে শুরু করেছিল যে ২০১২ সালের নির্ভয়া কাণ্ডের অভিযুক্তদের মত এই অভিযুক্তরাও জনসাধারণের দেওয়া আয়কর এর উপর নির্ভর করে অনেকদিন বেঁচে থাকবে এবং নিপীড়িত পরিবারগুলি ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় বারবার আদালতে ছুটে যাবে৷ ভারতের প্রচলিত আইনের উপরে দেশবাসীর আস্থা কমছে তাই তারা দ্রুত ন্যায় বিচারের দাবি করছে৷ এই ধরনের মানসিক অবসাদ থেকেই পুলিশদের নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেছে বিবিসি৷
সিএনএন বলেছে- পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছে ফায়ারিং মৃত্যু হয়েছে অভিযুক্ত তাদের ওপর পুলিশের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে৷ কিন্তু ঘটনাস্থলে কতজন পুলিশ কর্মী ছিলেন সে ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি৷ অভিযুক্তরা কিভাবে পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিল, সেই প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি৷
নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে -ঘটনাটি এই মাসের মধ্যে ভারতের সবথেকে দুঃখজনক ঘটনা৷ একটি দুঃখের ঘটনা চমকপ্রদ ভাবে শেষ হলো৷ এনকাউন্টারের ঘটনার পর কিভাবে জনগণ পুলিশকে স্বাগত জানিয়েছে সেই দৃশ্যও বর্ণনা করা হয়েছে এই সংবাদমাধ্যমে৷
ওয়াশিংটন পোস্টে হায়দ্রাবাদ এনকাউন্টারের ঘটনায় ভারতের দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ বলে এই সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, সন্দেহভাজন অপরাধীদের পুলিশের হাতে মৃত্যুর ঘটনা ভারতের প্রায়শই হয়ে থাকে যাকে এনকাউন্টার কিলিং বলে উল্লেখ করা হয়৷ আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ তদন্তের কথাও বলে৷ সমাজকর্মী এবং আইনজীবীদের মাতে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ আধিকারিকরাই শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান৷
কাতারের নিউজ পোর্টাল আল-জাজিরা বলেছে – ভারতীয় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে৷ এই ওয়েবসাইটে বাচ্চাদের এনকাউন্টারের ঘটনাকে জম্মু-কাশ্মীর ও আন্দোলনকারীদের সমস্যা সংক্রান্ত সন্ত্রাসবাদীদের উপর তদন্তের সঙ্গে তুলনা করে উল্লেখ করেছে৷ অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেন অ্যাসোসিয়েশনের সচিব কবিতা কৃষ্ণণ আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত চারজনই পুলিশ কাস্টডিতে তাই তাদের কাছে কোন অস্ত্র থাকার কথা নয় সেক্ষেত্রে পুলিশের ওপর হামলা চালানোর প্রশ্নই ওঠে না৷
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ‘দ্য ডন‘- আল-জাজিরার সুরেই বলেছে, হায়দ্রাবাদ পুলিশের এই এনকাউন্টারের ঘটনাকে তারা মুম্বাইয়ের গ্যাং-ওয়ার এবং পাঞ্জাব-কাশ্মীরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে এনকাউন্টারের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে ভারতীয় পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছে৷ পত্রিকা আরো বলা হয়েছে একসময় এনকাউন্টারে সঙ্গে যুক্ত পুলিশদের ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্টের’ তকমা দেওয়া হতো এবং তাদের নিয়ে চলচ্চিত্রও তৈরি হতো৷