আমি বিধানসভা ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

আমি বিধানসভা ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: সালটা ছিল ২০০৬৷ শাসক-বিরোধী দ্বন্দ্বে রাজ্য বিধানসভার অন্দরে নজিরবিহীন ঘটনার স্বাক্ষী ছিল গোটা বাংলা৷ বিরোধীরা অভিযোগ করেন, তৃণমূল সুপ্রিমোর উপস্থিতিতে ভাঙা হয়েছে বিধানসভা! বিরোধীদের তোলা সেই অভিযোগের জবাবা দিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজ বাজেট আলোচনায় বিরোধীদের চাঁচাছোলা ভাষায় আমন্ত্রণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷
রাজ্যপালের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট আলোচনায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করছেন বিরোধীরা৷ তারপরও কেন বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তাদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না? সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর হচ্ছে, কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে না?

বিরোধীদের অভিযোগ, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে এই রাজ্যে বিরোধীদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে৷ সভা-সমিতি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না৷ এমনকি ঐশী ঘোষকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সভা ও দুর্গাপুরে মিছিল পর্যন্ত করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি৷ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রানিরাসমণি রোড গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূল দখল করে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছে৷ একটাই মাত্র সভা-সমাবেশ করার জায়গা ছিল কলকাতায়৷ রানিরাসমণিতেও এখন সভা করা যাচ্ছে না৷

কেন বিরোধীরা সভা করতে পারছেন না? তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যে সব থেকে বেশি বিরোধীরা সভা করার অনুমতি পাচ্ছেন৷ তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়৷ কিন্তু তারা যদি পরীক্ষার সময় অনুমতি চায়, তা তাদের দেওয়া হবে না৷ সভা করার নামে, মিছিল-মিটিং করার নামে যদি কেউ সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, তাদেরকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার পরেও তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না? এই নিয়ে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷

বিধানসভা থেকে জানিয়ে দেন, বিরোধীদের সভা করতে অনুমতি দেওয়া হয় এই রাজ্যে সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে৷ একই সঙ্গে এ দিন বিরোধীদের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী৷  আজ বিধানসভায় সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছিলেন, বলা হয়, বাম-কংগ্রেসের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে৷ কিন্তু তাহলে ভবানীপুরে বিজেপির ভোট কীভাবে বাড়ল? এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদবপুর নিয়ে আপনারা ভাবুন৷ ভবানীপুর নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না৷

বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, নাগরিকত্ব বিরোধী আইন প্রতিবাদে দু’জনকে গুলি করে মারা হল? মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরস্বতী পুজোর দিন কেন বনধ ডাকা হল? কেন সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলা হচ্ছিল? ইচ্ছাকৃতভাবে গন্ডগোল করা হচ্ছিল৷ এই যে দু’জন মারা গিয়েছে, তাদের দায়িত্ব বিরোধীদের বিরোধীরা এড়াতে  পারে না৷ মুখ্যমন্ত্রী আজ বিধানসভায় বিরোধীদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন৷ বলেন কংগ্রেস যত সিপিএমের পাশে যাচ্ছে, তত তারা সাইনবোর্ডে পরিণত হচ্ছে৷ গোটা দেশের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ এই জন্যই তিনি তৃণমূল তৈরি করেছিলেন৷ এই কারনেই তিনি কংগ্রেস ছেড়েছিলেন৷ একই সঙ্গে তিনি কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে বলেন, যেখানে যেখানে আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিশালী হয়েছে, সেখানে কংগ্রেসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ যেখানে আঞ্চলিক দল নেই সেখানে কংগ্রেস বিরোধী ভোট পাচ্ছে৷ বিধানসভায় কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিকভাবে এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷

এদিন বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনা সেক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী জানান, ওই দিন কে বিধানসভা ভাঙচুর করেছিল, ভিডিও দেখানো হোক৷ তাঁর চ্যালেঞ্জ, তিনি বিধানসভায় সেদিন গিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ কিন্তু তিনি সেদিন কোনও ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + 9 =